নীলফামারীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সরকারি জমি দখলের মহোৎসব

আল-আমিন, নীলফামারী প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম

নীলফামারীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি জমি দখল এবং বিক্রি মহোৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা।

নীলফামারী-সৈয়দপুর মহাসড়কের ঢেলাপীর কাদিখোল নামক স্থানে বরাদ্দকৃত অর্থনৈতিক অঞ্চলের এসব সরকারি জমি দখলের মহোৎসবে কোমর বেধে নেমেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রথমে সরকারি জমি দখল করে পাকা-আধাপাকা স্থাপনা তৈরি করছে চক্রটি। স্থাপনাগুলো বিভিন্ন মানুষের কাছে দিচ্ছে ভাড়া। এরপর দখল করা ওই স্থাপনাগুলো লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে করে দেওয়া হচ্ছে বিক্রি।

দিনের পর দিন এসব সরকারি জমি দখল হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে জানা যায়, ঢেলাপীর কাদিখোল নামক স্থানে সরকারি খাসজমি রয়েছে ১০৬ একর। ওই জমি কয়েক যুগ থেকে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। গত ২০১৬ সালে ২৯ মার্চ তৎকালীন জেলা প্রশাসক দীর্ঘমেয়াদি লিজে ওই জমি ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে’ প্রদান করে। লিজ প্রদানের ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’ কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ ও সীমানা চিহ্নিত করণের কাজ করেনি।

আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় একটি ভূমিখেকো চক্র জমি দখল এবং তা বিক্রির হলিখেলায় মেতে উঠেছে। সংগলশী ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও নীরবে রয়েছেন তারা।

অভিযোগ উঠেছে এসব জমি দখল এবং বিক্রয়ের টাকার একটি অংশ তাদের পকেটেও যায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ওই সরকারি বিশাল জায়গায় বড় বড় স্থান দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী স্থাপনা। কেউ তৈরি করছেন পাকা ঘর আবার কেউবা তৈরি করছেন আধাপাকা ঘর। মহাসড়ক সংলগ্ন জমিতে কেউ কেউ তৈরি করেছেন দোকান ও গোডাউন ঘর।

সম্প্রতি মহাসড়কের পাশেই বিশাল জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন জিয়া নামের এক ব্যক্তি।’

ওই স্থানে বাড়ি ভাড়া নেওয়া ইসমত আরা নামের এক নারী বলেন, আমরা বাদশা নামের এক লোকের কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছি। প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ তাকে ২৫০০ হাজার টাকা প্রদান করি।

মহাসড়ক সংলগ্ন হোসেন রহমান নামে এক দোকানদার বলেন, আমি এক ব্যক্তির কাছে এই ছোট দোকানটি ভাড়া নিয়েছি। প্রতিমাসে তাকে ভাড়া দেই। সে যখন চলে যেতে বলবে চলে যাবো।

এসব সরকারি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে সংবাদকর্মীদের সামনে কেউ স্বীকার না করলেও অনেকেই ভূমি খেকো চক্রটির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জমি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, এসব জমি ক্রয়ের পিছনে রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এরা সব সময় কিছু গুন্ডা প্রকৃতির ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে বের হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্থানীয় প্রভাবশালী মশিউর রহমান লিটন, জিয়া ইসলাম, বাদশা রহমান। এরা জমি দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরি করে কখনও ভাড়া দিচ্ছে আবার কখনও বিক্রি করছে। প্রশাসন আসে দেখে, লিখে নিয়ে যায়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।

মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে মার্কেট তৈরি করা জিয়া নামের ওই ব্যক্তির সাথে মুঠোফোনে এবং তার বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

তার ছেলে ইকবাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জমিটি আগে থেকেই আমাদের দখলে আছে। এখন আমরা একটি হোটেল তৈরি করার জন্য পাকা ঘর নির্মাণ করছি।

লিটন নামে এক ব্যক্তি প্লট আকারে জমি বিক্রির বিষয়ে প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও অকপটে স্বীকার করে সরেজমিনে তদন্ত করা পরামর্শ প্রদান করেন জিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন।

অভিযোগের বিষয়ে মশিউর রহমান লিটন মুঠোফোনে বলেন, আমি বাড়ি ভাড়া দিয়েছি বা আমার কোনো বাড়ি সেখানে আছে কি না আপনি যাচাই করেন। কেউ যদি বলতে পারে তাহলে আমার নামে যা লিখার লিখেন আপনি। ওখানে মার্কেট-বাড়ী তৈরি করতেছে জিয়া।’

অপর ব্যক্তি বাদশা রহমানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয় নি।

এ বিষয়ে সংগলশী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা ওই অঞ্চলের একটি রিপোর্ট আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। দখলের বিষয়ে তাদেরকে একাধিকবার নিষেধ করার পরও তারা কথা শুনে না।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, আমি কয়েকদিন হল নীলফামারীতে যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। সরকারি জমি দখলের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ