৪ দিন পর লাশ উদ্ধার

স্বামীকে ৯ টুকরো করে সেফটি ট্যাংকে ফেলে দিল স্ত্রী

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৪, ১১:০৬ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে হত্যা করে নয় টুকরা করে ইট দিয়ে পলিথিনে পেঁচিয়ে পাশের বাড়িতে সেফটি ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা হয়।

ঘটনার চারদিন পর গতকাল (মঙ্গলবার) তার লাশ উদ্ধার করেছে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশ। এই ঘটনায় ঘাতক স্ত্রী মোমেনা বেগম, তার ছেলে রাসেল ও মেয়ে লাকীকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল অরুন মিয়া। নিহতের বাবার নাম সুরুজ ব্যাপারী।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামের মধ্যপাড়ার অরুণ মিয়া প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর পর ৩৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিবাহ করেন একই গ্রামে মোমেনা বেগমকে। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চরম আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে অরুন মিয়া তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান রুবেলের কাছে ঢাকায় চলে যান। এদিকে অরুন মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান দুবাইয়ে কর্মরত অবস্থায় মারা যান দেশে এনে তার লাশ দাফন করা হয়। তার বিদেশ যাওয়ার সময় পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করেন এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা দেনা থাকায় পরবর্তীতে অরুন মিয়া তার জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেন। 

গত শুক্রবার বিকেল থেকে অরুণ মিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ বিষয়ে গত সোমবার তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে অরুণ মিয়ার পার্শ্ববর্তী বাড়ির সৌদি প্রবাসী মনির মিয়ার সেফটি ট্যাংকির কাছে দুর্গন্ধ পায় এলাকাবাসী এসময় তারা টর্চ লাইট দিয়ে ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো কিছু দেখতে পায় । এরপর থানা পুলিশের খবর দিলে পুলিশ এসে সেফটি ট্যাংকের পানি সেচে নয় টুকরো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো অংশ উদ্ধার করে এটা অরুণ মিয়ার লাশ বলে তার ছেলে শনাক্ত করে।

প্রতিবেশী কুদ্দুস মিয়া জানান, কত শুক্রবার আমরা সাথে অরুণ মিয়া নামাজ পড়েছে তারপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল তার বউ আমাদের বলেছে শুক্রবার সকালে সে ঢাকা গিয়েছে এ বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হয় । পরবর্তীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমরা মনিরের বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কে  দুর্গন্ধ পাই পরে আমরা টর্চ লাইট দিয়ে দেখি পলিথিনে মোড়ানো কিছু জিনিস। আমরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে ৬০ টুকরো পলিথিন উদ্ধার করে এতে প্যাঁচানো এগুলো খুলে লাশ শনাক্ত করে তার ছেলে। 

অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল জানান, আমার বাবা সাত বছর আমার কাছে ছিল কিছুদিন আগে আমার প্রতিবেশী চাচারা বিষয়টি মিটমাট করে দেয় এবং আমার ছোট মায়ের সাথে আমার বাবা থাকা শুরু করে। এরমধ্যে আমার ভাই সৌদি আরবে মারা যায়। তার বিদেশ যাওয়ার সময় অনেক টাকা দেনা ছিল পরবর্তীতে আমার বাবা একসাথে জমি বিক্রি করে এই দেনা পরিশোধ করে। গত কয়দিন যাবত আমি ফোনে আমার বাবার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।

পরে গত রবিবার আমি বাড়িতে আসি এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি, আমার বাবা কে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে আমাদের বাড়ির পাশে মনির মিয়ার বাড়ির সেফটি টেংকিতে গন্ধ বের হলে এলাকার লোকজন টর্চার ভিতরে পলিথিন কিছু অংশ দেখতে পায় পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে  নয় টুকরো ইট দিয়ে মোড়ানো পলিথিন ব্যাগ  উদ্ধার করে। পরে এগুলি খুলে আমার বাবার লাশ শনাক্ত করি।

বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত সুজন চন্দ্র পাল জানান, পারিবারিক কলহের জেরে মোমেনাকে মাথায় আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। মোমেনা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে টুকরো করে নয়টি পলিথিনে বেদে পার্শ্ববর্তী সৌদি প্রবাসী মনির মিয়ার সেফটিতে ফেলে দেয়। আজ এলাকাবাসী পলিথিনগুলো দেখে আমাদের খবর দিলে গিয়ে উদ্ধার করে এবং তার ছেলে শনাক্ত করে এটা অরুন মিয়ার লাশ। এই ঘটনায় মোমেনা বেগম তার ছেলে রাসেল ও মেয়ে লাকিকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে।

বিআরইউ