ফরিদপুরে অপহরণ মামলার পর সেই কিশোরী মুক্ত

ফরিদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম

ফরিদপুরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের অপহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠা সেই কিশোরী (১৬) সেফ হোম থেকে মুক্ত হয়েছেন। যদিও ওই কিশোরীকে সংবাদকর্মীসহ স্থানীয়দের সামনে কথা বলতে দেয়া হয়নি অজ্ঞাত কারণে।

কিশোরীর পরিবার ইতিপূর্বে তাকে (কিশোরীকে) খ্রিষ্টান ধর্মে দিক্ষিত করার লক্ষ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন সংবাদকর্মীদের কাছে, যা তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো এলাকায়।

মামলার আইনজীবী গোলাম মনসুর নান্নু জানান, ১৮ মে আদালতে উপস্থাপনের পর বাবা মায়ের জিম্মায় দিতে চাইলে ওই কিশোরী যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় তার মা রওশনারা বেগম তাকে (কিশোরী) জোরপূর্বক বয়স্ক ব্যক্তির সাথে বিবাহ দেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানালে আদালত তাকে সেফ হোমে পাঠায়। পরে একাধিকবার আদালতের ধার্য তারিখে আদালত মায়ের জিম্মায় পাঠাতে চাইলে সে (কিশোরী) যেতে অস্বীকৃতি জানায়।

এদিকে, ওই কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে শরিফুল ইসলাম বাবু ও তার সাথী সঙ্গীরা, তাকে (কিশোরী) ফুসলিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাবি করা হয়। এমনকি আরও অনেককে একইভাবে প্রলোভন দেখিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে দিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তাদেরকে একটি “বিশেষ চক্র” ট্যাগ দেয়া হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এলাকাবাসীর মধ্যে। এমনকি জনরোষ তৈরি হলে গা ঢাকা দেন শরিফুল ইসলাম বাবু।

এ মামলার এক নম্বর আসামি শরিফুল ইসলাম বাবু জানান, ওই কিশোরীর মা ও বাবার অপপ্রচারের কারণে তিনি নিজ এলাকায় থাকতে পারছেন না। প্রাণ সংশয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যে কোনো সময় তার উপর হামলা হতে পারে বলে জানান তিনি। বাবু এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

কিশোরীর মামি আম্বিয়া বেগম জানান, মামলার বাদী ও কিশোরীর মা রওশনারা বেগম খুবই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির মানুষ, তিনি তার আপন ননদ। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তিনি একই উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় জামাইকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি দাবি করেন, তার (রওশনারা) অত্যাচারে বাড়ি-ঘর ফেলে তারা ঢাকাতে চলে যান।

তিনি বলেন, ভিকটিম মেয়েটিকে ছোটো বেলা থেকেই কোলেপিঠে করে মানুষ করায় তার সাথে সখ্যতা বেশী। আর মা রওশনারা তার মেয়েটির সাথে বকাবাজি এবং অসদাচারণসহ ইচ্ছার বিপরীতে নানা ধরনের কাজ করানোর চেষ্টা করায় মেয়েটি আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল মায়ের উপর। ওই দিনও বকা দেয়ায় সে রাগান্বিত হয়ে আমার কাছে ঢাকায় চলে যায়। মামলা হওয়ার পর তিনি নিজেই সাথে করে থানায় কিশোরীকে উপস্থাপন করেন বলেও জানান।

তিনি আরও বলেন, নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে রওশনারা (কিশোরীর মা) আমাদের সবাইকে খ্রিষ্টান ট্যাগ দিয়েছেন। এতে আমরা সমাজের চোখে ঘৃণিত হচ্ছি এবং বর্তমানে প্রাণ সংশয়ে আছি। এ ঘটনায় তিনি সুষ্ঠু প্রতিকার দাবি করেন।  

এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার(এসপি) আব্দুল জলিল জানান, খ্রিষ্টান ধর্মে দিক্ষিত করার কোনো অভিযোগ কেউ করেনি পুলিশের কাছে। তবে অপহরণ মামলা হয়েছিলো। ওই কিশোরীকে সেফ হোম থেকে বাবার জিম্মায় দেয়া হয়েছে, তার (কিশোরীর) সাথে কথা বলে ব্যতিক্রম কিছু থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইএইচ