ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা: উপকূলীয় জেলে পরিবারের মাঝে বেড়েছে হতাশা

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা থেকে প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ০৮:৫৯ পিএম

রোববার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা।

মা ইলিশ রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১৩ অক্টোবর (রোববার) থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বিক্রয় ও পরিবহণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

অপরদিকে, সাগরে বার বার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ বছর জেলেরা আশানুরূপ মাছ শিকার করতে পারেননি। নতুন করে মাছ ধরা বন্ধের ঘোষণায় উপকূলের জেলেদের মাঝে হতাশা ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী ফিশিংবোট মালিক ও জেলেরা জানান, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে তারা ৯-১০ বার বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েছেন। উত্তাল সাগরে মাছ ধরতে না পেরে খালি ট্রলার নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হওয়ায় তারা বিপুল আর্থিক লোকসানে পড়েছেন।

পাথরঘাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোস্তফা আমার সংবাদকে বলেন, সাগরে মাছ ধরতে একেকটি ট্রলারের পিছনে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করতে হয়। এ বছর সাগরের আবহাওয়া নয়-দশ দফা খারাপ হওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে পারেনি। ফলে বিপুল পরিমাণ লোকসান হওয়ায় জেলে মহাজনদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। প্রতি বছর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়েই জেলেরা বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরে বর্তমানে আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বেকার জেলেদের মাঝে হতাশা ও উৎকণ্ঠার পাশাপাশি মানবতার জীবন যাপনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বরগুনার ট্রলার মালিকরা বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে তাদের ফিশিংবোট নয়-দশ বার সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ায় মাছ ধরতে না পারায় প্রতিবারই তাদের লোকসান হয়েছে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় দেশীয় জেলেরা মাছ ধরতে না পারলেও পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা ঠিকই মাছ ধরে নিয়ে যায়।

বরগুনা মৎস্য অফিসের হিসাব অনুযায়ী নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৬ হাজার। বেসরকারি হিসেবে জেলেদের সংখ্যা লক্ষাধিক। তবে বিভিন্ন সময়ের নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৬ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া চাল বিতরণেও রয়েছে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ।

এফবি আল্লাহর দানের মাঝি রাজু আমার সংবাদকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুনে যখন ফিরছিলাম তখনই দেখলাম শত শত ভারতীয় ট্রলার মাছ ধরছে। এরকম প্রতি বছর তারা বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যদি এভাবে তারা ধরে থাকে তাহলে তো আমরা কোনো বছরই মাছ পাব না। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই ভারতীয় জেলেরা আমাদের জলসীমায় যেন প্রবেশ না করে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সদস্যরা বলেন, সরকারের সকল নিয়মকানুন জেলে এ ট্রলার মালিকরা মেনে চলে। সেইদিকে লক্ষ্য করে অবরোধ আসলেই শুধু ২৫-৩০ কেজি চাল বিতরণ করলেই হবে না। জেলেদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত যে চাল দেয়া হয় এতে তাদের সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে যায়। তাই চালের পাশাপাশি নগদ অর্থও দিতে হবে। অন্যথায় জেলেরা ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহাসিন আমার সংবাদকে বলেন, ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ২২ দিন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলের সকল নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। এই ২২ দিনে মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বরগুনার পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর নদীর ৪০টি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পয়েন্টে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ মা ইলিশ ধরলে কিংবা মজুদ ও বিক্রি করলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় নিয়ে এসে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নদীতে ও সাগরে পাহারায় থাকবে। নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত চাল তাদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।

ইএইচ