মালি থেকে কোটি টাকার মালিক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম

বান্দরবানের লামা উপজেলার ৯নংফাইতং ইউনিয়ন  যেন আকাশচুম্বী দুর্নীতির আখড়া। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আওয়ামী লীগের প্যানেলে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে।

কর্মজীবনের প্রথমে দিকে ওমর ফারক ছিল ফরেস্ট অফিসের একজন সাধারণ মালি। পরবর্তীতে ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার টিকে থাকার কারণে শিল্পনগরী খ্যাত ফাইতং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

এরপর থেকে নামে বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ায় ব্যস্ত দিন কাটতো তার। জমি দখল ও বিচার পাইয়ে দিবে বলে অসংখ্য মানুষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে ফাইতং ইউনিয়নের নানান শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়- একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। ফাইতং ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ মানুষ অসংখ্যবার চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করলে ও প্রশাসন থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে।

ফাইতং ইউনিয়ন লামা উপজেলার শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাত বিভিন্ন রকম ব্যবসার সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই ইউনিয়নে। বিশেষ করে বান্দরবান জেলার ৬৭টি ইটভাটার মধ্যে ২৮টি রয়েছে ফাইতং ইউনিয়নে।

এছাড়াও বাঁশ-কাঠ সব ধরনের ব্যবসার ট্রানজিট পয়েন্ট ও ভৌগোলিকভাবে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ সুবিধা রয়েছে ফাইতংয়ের।

ইটভাটা মালিক নাজেম উদ্দিন জানিয়েছেন- প্রতিটি ভাটার ট্রেড লাইসেন্স বাবদ টাকা আদায় করা হয় ১৫-২০ হজার টাকা। পরিষদের রিসিভ খাতায় লিখা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স আদায়ের নামে প্রতি সিজনে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় প্রতিটি ইটভাটা থেকে। এই টাকার কোন রশিদ বা টোকেন দেওয়া হয় না ভাটা মালিককে।

একাই আত্মসাৎ করে আসছেন এই টাকা বিগত ৩ বছর ধরে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক।

জেলা পরিষদের লিজের নাম দেখিয়ে ২৮ ইটভাটার প্রতিটি থেকে টাকা আদায় করে প্রতি সিজনে ২-৩ লাখ করে।

বেশ কয়েকজন ভাটা মালিক বলেছেন- জেলা পরিষদের ওয়ার্ক কার্ড না থাকা সত্ত্বেও এই টাকা ভাটা মালিকদের কাছ থেকে একপ্রকার জোরপূর্বক আদায় করত।

ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান- (ভিজিডি) কার্ড হোল্ডার ৩০০ জনের ২ বছরে জমাকৃত ১৪ লাখ টাকার মতো একাই হজম করেছে ওমর ফারুক। এছাড়া মুজিব শতবর্ষ ঘর তৈরির সময় প্রতিটি ঘর   থেকে ২৫-৩০ হাজার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওমর ফারুক ও উপজেলার পিআইও মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

পরিষদের এক নারী ইউপি সদস্য জানান- পরিষদ চলাকালীন সময়ে চলে ভাষার বৈষম্য আচরণ, ১২ জন ইউপি সদস্যদের মধ্যে ৩ জন রয়েছে উপজাতি সদস্য, চেয়ারম্যান ওমর ফারুক আগে উপজাতি ধর্মে ছিলেন বর্তমান সে মুসলিম ধর্ম পালন করেন। তারপরও সে তার পরিষদের কক্ষে উপজাতি ইউপি সদস্যদের সাথে মগ ভাষায় কথা বলেন যার কারণে অন্যান্য মুসলিম ইউপি সদস্যরা বিভ্রান্তকর পরিস্থিতিতে পড়েন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের নামে প্রভাব বিস্তার করে গড়েছে নামে বেনামে সম্পদের পাহাড়।

ইএইচ