যৌথবাহিনীর অভিযানে ৫০ কোটি টাকার বনভূমি উদ্ধার

কাশিমপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনভূমির জমি দখলমুক্ত করতে যৌথ বাহিনীর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। 

বুধবার(২৩ অক্টোবর) সকালে পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্ব চান্দরা মুন্সির টেক এলাকায় কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আহম্মেদের নেতৃত্বে এই অভিযান শুরু করা হয়। 

এতে বন বিভাগের সহায়তায় পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, ও আনসার বাহিনী অংশগ্রহণ করে। উক্ত অভিযানে ছয় একর বনভূমির উদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকা।

উপজেলার মুন্সীরটেক এলাকায় সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল আলম, শামসুল আরেফীন,কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম, শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান এবং রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানা।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে দখল হয়ে থাকা বন বিভাগের এই সম্পত্তি ফেরত আনতে বিভিন্ন সময়ে দখলদারদের মৌখিক ও লিখিত নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তবে দখলকারীরা কোনোভাবেই জমি ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সহায়তায় বন বিভাগ অভিযানের মাধ্যমে বনভূমি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় বন বিভাগ।

কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম জানান, উদ্ধার হওয়া জমির আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি সময়ে জমিটি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছিল। আমরা বহুবার দখলদারদের নোটিশ প্রদান করেছি,কিন্তু তারা দখল ছাড়েনি।

এবিষয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আহম্মেদ বলেন,বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে।এই জমিগুলোতে গাছ নিধনসহ নানা ধরনের অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। বন বিভাগ তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে, কিন্তু দখলদারদের প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে এই অভিযান পরিচালনা করেছি।

তিনি আরোও বলেন, এ ধরনের অভিযান আমরা আরো চালিয়ে যাব।অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা করা হবে।

এসময় স্থানীয় অধিবাসীরা এই অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বনভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও গাছ কাটা হচ্ছিল, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল। বন বিভাগের এই উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায় এবং আশা প্রকাশ করেন সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোকে এভাবেই রক্ষা করা হবে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,এ অভিযানের ফলে দখলমুক্ত হওয়া জমিগুলোতে বনায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।এতে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি ঘটবে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সময় কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে যৌথ বাহিনীকে। দখলকারীরা প্রথমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তারা পিছু হটে।অভিযানের সময় প্রশাসন কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে এবং অবৈধ স্থাপনাগুলো ভেকু দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান,অভিযানের পর দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেকোনো ধরনের পুনরায় দখলের চেষ্টা প্রতিহত করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালানো হবে।

সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল আলম বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা করতে, তবে দখলদারদের প্রভাব অনেক সময় আমাদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়।আজকের অভিযানের মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি প্রশাসনের সহায়তায় দখলকারীদের বিরুদ্ধে সফলতা পাওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতে যাতে বনাঞ্চলগুলো আবারও অবৈধ দখলের শিকার না হয় সে জন্য নিয়মিত অভিযান ও নজরদারি জোরদার করা হবে।

কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা বিট এলাকায় যৌথ বাহিনীর এই সফল অভিযান বন বিভাগের জমি রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ উভয়েই এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো রক্ষায় এই ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালিত হলে বনাঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে উচ্ছেদে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন।

বিআরইউ