শারীরিক প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নুরুন্নাহার

জয়পুরহাট প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের আমিরপুর কয়েশকুল গ্রামের অমেদ আলী নুরুন্নাহার দম্পতির চার ছেলে মেয়ের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী রেনু বেগম (৪০) ও বেলাল হোসেন (৩০)।

স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নিয়েছিল তারা। এমন ফুটফুটে ছেলে মেয়ে সংসারে আসায় আনন্দের যেন শেষ ছিল না অমেদ দম্পতির। বেলাল রেনুর বেড়ে ওঠার সাথে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা চলা আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথায় আনন্দে ভরে উঠেছিল তাদের সংসার। হঠাৎ অবুঝ শিশু দুটি পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়। পরিবারে পক্ষ থেকে অনেক চিকিৎসা ও ডাক্তার দেখানোর পরও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি তারা। হয়ে যান শারীরিক প্রতিবন্ধী।

সরেজমিনে আমিরপুর কয়েশকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রেনু বেগম তার নিপুণ হাতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত। আর পাশেই বৃদ্ধ মা নুরুন্নাহার বেগম বারান্দায় একপাশে বসে আছে। আর ঘরে বসে বেলাল পড়াশুনায় ব্যস্ত। বেলাল শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্কুলে যেতে না পারলেও বাড়িতে বসে ১ম থেকে ১০ম শ্রেণির সমস্ত বই আয়ত্ত করে ফেলেছেন। শুধু তাই নয় তিনি ৫ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত টিউশনি করে নিজের রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন করাতেও সক্ষম বলে জানান।

শারীরিক প্রতিবন্ধী বেলালের বড় বোন রেনু বেগম শুধু কাঁথা সেলাই নয়, রান্না বান্না, ঝাড়ু মোছাসহ বাড়ির সকল কাজ করতে পারেন। সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পেলে তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বেলাল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী হিসাবে জন্ম নেইনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধী। গ্রামের অনেকেই স্কুলে গিয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ হলেও আমাদের তা হয়নি।

রেনু বেগম বলেন, কোন অনুদান নয়, সরকারি কোন কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করলে আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো।

তবে তাদের মা নুরুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এভাবেই ৪০ বছর থেকে আদর যত্ন করে তাদের আগলে রেখেছি। তাদের পিতাও মৃত্যু বরণ করেছে কয়েক বছর আগে। আমারও বয়স হয়ে গেছে। কবে ডাক আসবে জানি না। আমার অবর্তমানে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। তারপরও তাদের আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।

তাদের বড় ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, আড়াই বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়। আমরা না জানার কারণে তারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, তারা শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাদের অনেক প্রতিভা আছে। সরকারিভাবে কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও তারা নিজেরাই উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হতে পারবে।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের জন্য আরো সংস্থা রয়েছে। তারা আগ্রহ দেখালে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।

ইএইচ