৫ আগস্ট ঐতিহাসিক বিল্পবের পরে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার কয়েক দিনের মাথায়ই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এর কিছুদিন পর অব্যাহতি দেওয়া হয় পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরদের। বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি। যার ফলে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এসে পরে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত ইউএনওদের ওপর।
সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ সবার আগে ছুটে যান ইউএনওদের কাছে। এখন যেন জনসাধারণের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনওরা।
আইনের মধ্যে থেকেই ইউএনওরা স্ব-স্ব এলাকার জনগণের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কয়েকটি কমিটিতে উপদেষ্টা এবং ৮ থেকে ১০টি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র না থাকার কারণে কমিটিসহ সব পদের দায়িত্ব এখন মঠবাড়িয়া উপজেলার ইউএনও আব্দুল কাইয়ূমের ওপর।
বর্তমানে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব। এছাড়া গণশুনানি, মোবাইল কোর্ট, বিভিন্ন বিরোধ মীমাংসা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং মা-বাবার ভরণপোষণ নানাবিধ সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিশ্চিতকরণসহ বর্তমানে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নিয়মিত রাতভর অভিযান পরিচালন করছেন ইউএনও।
এমন কর্মতৎপরতা দেখলে মনে হবে যেন তার কোনো ক্লান্তি নেই, নির্বিঘ্নে সুন্দরভাবে ইউএনও আব্দুল কাইয়ূম তার প্রতিটি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে মঠবাড়িয়ার প্রতিটি মানুষ যেন তার পরিবারের সদস্য।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষা, কৃষি উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ভাতা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, বয়স্ক-বিধবা ও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, মাতৃত্ব কালীন ভাতা, চোরাচালান প্রতিরোধ, এনজিও সমন্বয়, টেন্ডার, টিআর-কাবিটা, বিভিন্ন দিবস উদযাপনসহ উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউএনও। এখন সমন্বয় সভাও পরিচালনা করতে হচ্ছে। সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বও তার কাঁধে।
মঠবাড়িয়া সরকারি হাতেম আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, ইউএনও আমাদের উপজেলার সব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদরাসা এবং কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। যার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের তার কাছেই যেতে হয়। গেলেই দেখি তিনি নানান কাজে অনেক ব্যস্ত থাকেন। একজন ইউএনও উপজেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাকে এতো চাপের মধ্যে রাখা মোটেও ঠিক না। তবে অনেক চাপ থাকা মধ্যেও আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব কাজই খুব আন্তরিকতার সাথে করছেন।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও লেখক নূর হোসাইন মোল্লা বলেন, বর্তমানে ইউএনওর ওপর অনেক দায়িত্ব। তবুও তিনি অনেক আন্তরিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তার কাছে গেলে তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে নানা পরামর্শ দেন। এছাড়াও বর্তমানে সব সময় অধিক রাতেও ইউএনওকে অফিসে পাওয়া যায়। উনার এই আন্তরিকতায় উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও সন্তুষ্ট।
ইউএনও আব্দুল কাইয়ূম বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডাররা সর্বদা সরকার ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং সেবা প্রদানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার পরিবর্তনের পর আগের চেয়ে দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। তবে এ দায়িত্বকে আমি চাপ বা বোঝা মনে না করে জনগণকে সেবা দেওয়ার বাড়তি সুযোগ বলে মনে করছি। এ সময়ের কাজগুলো আমার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। যা ভবিষ্যতে আমার নিজের কাজে সহযোগী হবে বলেও আমি আশাবাদী।
ইএইচ