পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পিপঁড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদী ভাঙন যেন পিছু ছাড়ছে না বিদ্যালয়টির, পায়রা নদী থেকে বিদ্যালয়টি মাত্র ৩ মিটার দূরত্বে রয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে বিদ্যালয়ের বারান্দায় বড় আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে । যে কোনও সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে পায়রা নদীগর্ভে, আর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে চতুর্থবারের মতো সরানো হচ্ছে এ বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটি।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটি ভেঙ্গে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে মালামাল রাখা হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। পায়রার ভাঙ্গনের কারণে ওই এলাকার ৫-৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ইতিমধ্যে। গত ২৪ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র কাছে প্রতিষ্ঠান প্রধানের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার রক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন ইউএনও। তদন্ত শেষে রিপোর্ট পেশ করেছেন তদন্ত কমিটি।
জানা যায়, উপজলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিপঁড়াখালী গ্রামে বিদ্যালয়টি ১৯২৬ সাল প্রতিষ্ঠা করা হয়, ১৯৮৮ সালে এডিপির মাধ্যম পাঁকা ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ২০১৮ সালে পায়রা নদীতে বিলীন হয় যায় পাকা ভবনটি। এ বিদ্যালয়ে ৭জন শিক্ষকের স্থানে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত আছে ৩জন শিক্ষক। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি পায়রা নদী গর্ভে চলে গেলে স্থানীয় দ্বন্দ্ব ও জমি নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে গত চার বছর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের নতুন পাঁকা ভবন নির্মিত ব্যাহত হওয়ায় জটিলতা দেখা দয়। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়রা নদীর বেড়িবাঁধের পাশে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যান শিক্ষকরা। গত একমাসের অব্যাহত পায়রা নদীর ভাঙ্গনের কারণে বিদ্যালয়ের সামনে বেড়িঁবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটিতেও ফাটল শুরু হয়েছে। বর্তমানে টিনশেড ঘরটিও যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিত পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসায় বিদ্যালয়ের মালামাল রাখা হয়েছে এবং সেখান ক্লাশ পরিচালনা করা হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু সুজিৎ মজুমদার বলেন, বিদ্যালয়টি গত ২০১৮ সালে পায়রা নদীর ভাঙ্গনে পাঁকা ভবনটি বিলীন হয়ে যায়। এরপর ভাঙ্গনের কারণে চারবার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। স্থানীয় কিছু জটিলতার কারণে এখানে নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। নতুন ভবন বরাদ্দ হলেও পাঁচ বছর পর তা বাতিল হয়ে গেছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান প্রধান শিক্ষক বাবু সুজিৎ মজুমদার।
এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রিয়াজুল হক বলেন, বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর নতুন ভবন বরাদ্দ হয়েছিল। স্থানীয় জটিলতার কারণে ভবন নির্মাণ হয়নি। বিদ্যালয়টি ভাঙ্গনের কবলে পড়ায় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসায় ক্লাশ পরিচালনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিদ্যালয়টি সুবিধাজনক স্থানে স্থানান্তর ও দ্রুত মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি বেড়িবাঁধটি দ্রুত মেরামত করা হবে। পাশের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদর শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে। পরে সুবিধাজনক স্থানে বিদ্যালয়টি পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।
আরএস