সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে ২০০ বছরের পুরোনো তিন গম্বুজ মসজিদ

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ০১:০৬ পিএম

নেত্রকোণার পূর্বধলায় দুইশত বছর আগের তিন গম্বুজ একটি মসজিদ সংস্কারের অভাবে আজ ইতিহাসের সাক্ষী থেকে বিলীন হতে যাচ্ছে।

মসজিদটি এক নজর দেখতে বা এক ওয়াক্ত নামাজ পড়তে এখনও নিয়মিত দর্শনার্থীদের সমাগম যেন এলাকাটিকে সমৃদ্ধ করছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটিকে সংস্কার করে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি-বেসকারি পৃষ্টপোষকতা।

বলছিলাম, উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের সরিস্তলা গ্রামের তিন গম্বুজ মসজিদটির কথা। প্রাচীন নির্মাণ শৈলীর এটি একটি।

গবেষকদের মতে, উপজেলার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। মসজিদটি ঠিক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক কোন ইতিহাস না পাওয়া গেলেও মসজিদটির গঠনশৈলী ও নির্মাণের উপাদান দেখে ধারণা করা হয় যে, মসজিদটি মুঘল আমলের শেষ দিকে নির্মিত হতে পারে। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সরিস্তলা জামে মসজিদ নামে এর পরিচিতি রয়েছে।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণকোণে বিশকাকুনী ইউনিয়নের সরিস্তলা গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। মসজিদটি আকারে বেশ ছোট। মসজিদটির কারুকার্য অত্যন্ত সুন্দর এবং নান্দনিক। এর চার কোনায় রয়েছে চারটি ইটের পিলার। মসজিদের ওয়ালের পুরুত্ব একপাশে ২৪ ইঞ্চি আর এক পাশে ৩০ ইঞ্চির উপরে। পুরো অবকাঠামোতে একটি মাত্র দরজা ও দুইটি জানালা রয়েছে। এতো বড় আকারের মীমঘর না থাকলেও মীমঘর সদৃশ ছোট্ট একটু আকৃতি রয়েছে। ভিতরে তিনটি কাতারে ৪০ জনের মত মুসল্লি একবারে নামাজ আদায় করতে পারেন।

ভবনের উপরে কোন ছাদ নেই তবে তিনটি বড় গম্বুজই ছাদ হিসেবে কাজ করছে। মসজিদের বাইরে চতুর্দিকে বিভিন্ন নকশা করে কাজ করা হয়েছে।

মসজিদের উপরে দেখা গেছে, তিনটি গম্বুজকে অত্যন্ত সুন্দর ও নান্দনিকভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও উপরের গম্বুজের চতুর্দিক কলসি আকৃতির ছোট ছোট মিনার তৈরি করা হয়েছে যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 
মসজিদের নির্মাণ কাজে সিমেন্ট বালির পরিবর্তে পাতলা ইট চুন ও লালী ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। কালের আবর্তে মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ছোট ছোট ভাঙন ধরেছে।  

ঐতিহাসিক এ মসজিদটিকে রক্ষা করতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

মসজিদ কমিটির সভাপতি স্থানীয় আব্দুল খালেক বলেন, লোকমুখে শুনেছেন ঐ এলাকার অজি মাহমুদ নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার কোন সন্তান না থাকায় মৃত্যুর পর মসজিদের পাশেই তাকে কবরস্থ করা হয়। শুরুতে মসজিদটি ১৮ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীদের মসজিদ লাগোয়া ঈদগাহ মাঠের জন্য আরও ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়। 
বর্তমানে মসজিদের মুসল্লি বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদের মূল কাঠামো ঠিক রেখে সামনে আরও একটু প্রসারিত করা হয়েছে।

লেখক গবেষক আলী আহম্মদ খান আইয়োব বলেন, পূর্বধলা উপজেলার পুরোনো মসজিদগুলোর মধ্যে সরিস্তলা তিন গম্বুজ ওয়ালা মসজিদটি একটি। এর নির্মাণশৈলী পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা যায়, মসজিদটি মুঘল আমলের শেষের দিকে নির্মিত। মসজিদটিকে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খবিরুল আহসান বলেন, পুরোনো এই মসজিদটি তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ইএইচ