নোয়াখালীতে অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ বিপন্ন

ইমাম উদ্দিন আজাদ, নোয়াখালী প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ০৬:১৩ পিএম

নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। প্রশাসনের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ধোঁয়া নির্গমণের জন্য জিগজাগ ভাটা চিমনি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মানছে না কেউ।

ইট ভাটার ১ কিলেমিটারের মধ্যে কোন স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য কোন প্রতিষ্ঠান থাকলে ইট ভাটা স্থাপনা করা যায় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে এইসব ইটভাটা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৯টি উপজেলায় ১৫৬টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে বাংলা ভাটা রয়েছে ১১টি। সম্প্রতি জিগ-জাগ পদ্ধতির ৪১টি ইট ভাটা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জানা যায়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বছরের পর বছর চালু রয়েছে এসব অবৈধ ইটভাটা। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করলেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। এসব অভিযান পরিচালনা কালে প্রশাসনের লোকজনকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় রয়েছে ২০টির মতো অবৈধ ইটভাটা। আর সেসব ইটভাটা স্থানীয় সাবেক এমপি মো. আলীর হস্তক্ষেপের কারণে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

অতি সম্প্রতি হাতিয়ায় সাধারণ মানুষ এসকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরিবেশ অধিদপ্তর নোয়াখালী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হাতিয়ায় দুই একটি ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করে। এইসব ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ। কাঠ পোড়ানোর ফলে নষ্ট হচ্ছে অনেক গাছগাছালি।

বর্তমান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কঠোর নির্দেশনায় দিয়ে বলেছেন, নতুন করে আর কোন ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়া হবে না। যেসব অবৈধ ইটভাটা আছে তা বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি।

নোয়াখালীর ইটভাটা মালিক সমিতির নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, নোয়াখালীতে যারা বাংলা চিমনি ব্যবহার করে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন তা বন্ধের জন্য আমরা প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। যাদের জিগজাগ ইটভাটা রয়েছে প্রশাসন থেকে লাইন্সের মাধ্যমে ইট ভাটাগুলো চালানো হচ্ছে।

তিনি জানান, এসব ইটভাটা যখন গড়ে উঠে এর আশেপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ছিল না। এখন গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের দোহাই দিয়ে আমাদের ইটভাটা বন্ধের যে নির্দেশ দিচ্ছে সেটি পুনঃবিবেচনার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিহির লাল সর্দার বলেন- সরকারের নির্দেশনায় আর কোন ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়া হবে না। বর্তমানে যেসব ইটভাটার লাইন্সেসের মেয়াদ শেষ হয়েছে তা আর নবায়নের সুযোগ নাই। আমরা অচিরেই এই সব অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো, সরকারের নির্দেশনা আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতেই হবে।

নোয়াখালী ইটভাটা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ইকরাম উল্যা ডিপটি জানান, জিগ-জাগ পদ্ধতির ইটভাটাগুলো দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর যাবত সরকারের সকল আইন মেনে ব্যবসা করে আসছিলো।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারি সকল প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ে ছাড়পত্র হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন আইনের ফাঁক ফোকর দেখিয়ে কেন ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করা বন্ধ রেখেছেন?

এসব ইটভাটা বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সুবর্ণচরের সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে করা হয়।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল আমিন সরকারকে স্মারকলিপি দিয়েছে এলাকাবাসী।

ইএইচ