দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট আর এই জেলার সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা হাতীবান্ধা। হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্বপাশে সীমান্ত ঘেঁষে কয়েকটি ইউনিয়ন। ঠ্যাংঝাড়া, বড়খাতা, সিঙ্গীমারী, টংভাঙ্গা, গোতামারী ও ভেলাগুড়ী ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। অভিযোগ আসে, এই সীমান্তগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত রাতের আধারে পারাপার হচ্ছে মাদকসহ ভারতীয় গরু ও অন্যান্য চোরাচালান জাতীয় দ্রব্য। এর জন্য গরু প্রতি ১ হাজার টাকা দিতে হয় হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহামুদুন নবী কে।
প্রতি রাতে মাদক ও ভাতীয় গরু চোরাকারবারির কাজ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুন নবী। শীত যত ঘনিয়ে আসছে সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারত থেকে চোরা কারবারিদের মাধ্যমে পারাপার হচ্ছে শতশত ভারতীয় গরু, সাথে পার হচ্ছে মাদক।
এসব গরু আসার কারণে লোকসান হচ্ছে বাংলাদেশি গরু খামারিদের। সেই সাথে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি সীমান্ত এলাকার কৃষক ও গরীব অসহায় মানুষের ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলি ক্ষেত। এসব গরু বাংলাদেশে অভ্যন্তরে নিরাপদে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশি ঝামেলা থেকে এড়ানোর জন্য হাতীবান্ধা থানা অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুন নবীকে দিতে হয় গরু প্রতি ১ হাজার টাকা। এভাবেই প্রতি রাতে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন নবী।
সদ্য যোগদানকৃত ওসি মাহমুদুন নবী বিএনপি’র রাজনীতির সাথে অতীতে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। এই ক্ষমতাকে পুঁজি করেই তিনি হয়েছেন হাতীবান্ধা থানার ওসি। থানায় যোগদানের পরেই তিনি হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। মামলা নথিভুক্ত, মাদক ও গরুর সিন্ডিকেট তৈরি করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ভারত থেকে আসা গরু প্রতি ২৪০০ টাকা নেওয়া হয় বিভিন্ন দপ্তরের জন্য। যাতে করে নিরাপদে বিভিন্ন হাটে গরু বিক্রি করতে পারে। আর এসব টাকা কালেকশন করার জন্য ওসি মাহমুদুন নবী সীমান্ত এলাকায় লাইনম্যান হিসেবে বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া এলাকার খতিব, সাবেক ভেলাগুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার, আতিয়ার রহমান ক্যাটাং, ভেলাগুড়ী এলাকার মনছুরসহ আরো কয়েকজন। লাইনম্যানদের দেখভাল করার জন্য ওসির বিশ্বস্ত বডিগার্ড ফিরোজ কে দায়িত্ব দিয়েছেন ওসি।
এছাড়া লাইনম্যানরা মহাজনদের কাছ থেকে গরু প্রতি ২৪০০ টাকা নেয়, সেই টাকা থেকে হাতীবান্ধা থানার ওসিকে দেওয়া হয় ১ হাজার, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে দিতে হয় ৪ শত, গ্রাম পুলিশ ও মেম্বারকে ১’শ, সাংবাদিকদের তিন সংগঠনকে দিতে হয় ৫০ করে, বিট অফিসারকে দিতে হয় ১’শ ডিএসবি ১’শ , টহল পুলিশকে দিতে ১’শ ,দলীয় লোককে দিতে হয় ২’শ, ল্যাইনম্যান ২’শত টাকা এবং অন্যান্য ১’শ টাকা পায়।
বৌনচৌকি এলাকার আবু তালেব জানান, অনেকে ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। মুখ খুললে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চোরাকারবারিরা পুলিশের সহযোগিতায় ঘরের ভিতরে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ভেলাগুড়ি এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, রাতের আধারে গরু পারাপারের কারণে কৃষকদের ধানক্ষেতসহ নানা ফসলি ক্ষেত নষ্ট হয়। কিন্তু বলার কিছু নাই।
লাইনম্যান আতিয়ার রহমান ক্যাটাং এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওসি যোগদানের পর গত মাসের ১৮ তারিখের পর থেকে এ পর্যন্ত ২’শ গরুর ২ লাখ টাকা ওসিকে দেওয়া হয়েছে। আর বাকি ২০ থেকে ৩০ টি গরু এগুলো অল্প টাকা এটার হিসাব আর কি দেই। সেই সাথে সাংবাদিকদের নিউজ না করার অনুরোধ করে বলেন, ওসির সাথে কথা বলে আপনাদের মিট করার ব্যবস্থা করা হবে।
সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু পাচারকারী সাজ উদ্দিন এর সাথে কথা হলে তিনি জানায়, থানা থেকে নিয়োগকৃত লাইনম্যানের মাধ্যমেই তো ২৪০০ টাকা করে দেই। এ থেকে গরু প্রতি ১ হাজার টাকা হাতীবান্ধা থানার ওসি নেয়।
বিষয়টি নিয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসার মাহামুদুল হাসান বলেন, চোরাকারবারিদের মাধ্যমে ভারত থেকে গরু আসলে স্থানীয় খামারিরা লোকসানে পড়বে। তাই প্রশাসনের উচিত রাতের অন্ধকারে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ করা।
গরু পারাপারের বিষয়ে গোতামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোনাব্বেরুল হক মোনা বলেন, গরু পারাপারের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ৪’শত টাকা করে আপনার নামে ওঠানো হয় এ বিষয়ে জানতে চাইতে তিনি বলেন, থানার ওসি’র নিয়োগকৃত লাইনম্যানদের সাথে আমার এখনো কথা হয় নাই।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন নবী জানান, আমি কিছুই জানি না এবং আমি কারো কাছে থেকে কোন টাকা নেই না। আমি ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে আছি এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা হবে।
পুলিশের টাকার নেওয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, এ রকম কোন তথ্য পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআরইউ