১৮ বছর যাবত শিকলবন্দি প্রতিবন্ধী জামির উদ্দিন

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের আলীহরগাতী গ্রামের দিনমজুর রমজান আলীর ছেলে প্রতিবন্ধী জামির উদ্দিন ১৮ বছর যাবত শিকলবন্দি জীবনযাপন করছেন।

মাথার সমস্যা থাকায় জামির উদ্দিন সাত বছর বয়স থেকে শিকলবন্দি তিনি। টাকা-পয়সার অভাবে দরিদ্র পিতামাতা জামিরের সঠিক চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।

জানা গেছে, জামিরের পিতা দিনমজুর রমজান আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জামির উদ্দিন (২২) দ্বিতীয় সন্তান। সে বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। কিছুদিন পূর্বে মারা গেছে তার একমাত্র বোন।

জন্মের পর থেকে জামিরের মাথায় কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে সে পাগলের মত আচরণ করত। কখনও বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে আবার ফিরে আসত। এ কারণে একবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় সে।  

সেজন্য ঝামেলা এড়াতেই পরিবারের লোকজন প্রতিবেশীদের সহায়তায় তার পায়ে শিকল বেঁধে গাছের সাথে তালা মেরে রেখেছেন।

সারাদিন বাড়ির আঙ্গিনায় রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে একটি গাছের ছায়ায় তার থাকার নির্ধারিত জায়গা। সেখানেই গোসল, খাওয়া দাওয়া প্রাকৃতিক ডাকে সারা দেওয়া সবকিছুই সম্পন্ন হয়। শুধু রাতেই ঘরে যাবার সুযোগ মেলে তার। সকল সেবা শুশ্রূষা তার বৃদ্ধ মা বাবা করে থাকেন।

জামিরের চাচা শামছুল ইসলাম জানান, ছেলেটাকে নিয়ে তার মা-বাবা খুব কষ্ট করছেন।

জামিরের মা জুলেখা আক্তার জানান, বৃদ্ধ বয়সে জামিরের সেবা শুশ্রূষা করতে গিয়ে তিনি হাঁপিয়ে উঠেন। টাকা পয়সার অভাবে ছেলেটার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন মিয়া জানান, জামিরের বাবার ভিটেমাটি ছাড়া কোন জমিজমা নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। এ ছাড়া জামিরের একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে। এসব দিয়ে কোনোক্রমে চলছে পরিবারটি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও মানসিক রোগ বিভাগের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সহকারী অধ্যাপক ডা. হেফজুল বারী খান বলেন, জামিরের মত শতকরা ৮০ ভাগ রোগী চিকিৎসায় ভাল হয়ে যায়। আশা করি জামিরও ভাল হবে তবে এক্ষেত্রে তার দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন।

ইএইচ