বাড়ছে যানবাহনের চাপ, ফিরছে শৃঙ্খলা

বরিশাল ব্যুরো: প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যানবাহনের চাপ অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। বিশেষ করে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকেই  প্রতিদিন শতাধিক ট্রিপ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন কোম্পানির বাসও। সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের এই একমাত্র প্রবেশ পথটিতে এখন যানবাহনের আধিক্য চরমে।

এসব যানবাহন নিয়েই শুরু হয়েছে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি। একদিকে বাস পার্কিংয়ের জায়গার সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মূল সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ওঠানামা করানো। সবমিলিয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবেশ পথটিতে যানজট লেগেই ছিল। এক কথায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এই স্ট্যান্ডটিতে বিরাজমান ছিল চরম বিশৃঙ্খলা।

কিন্তু সেই জটিলতা কাটিয়ে বাস টার্মিনালের নয়া নেতৃত্ব ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বিত উদ্যোগের ফলস্বরূপ শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তি।

এতে একদিকে যাত্রীরা যেমন স্বস্তি পাচ্ছে অন্যদিকে একসময়ের তীব্র যানজটের কবলে থাকা বাস টার্মিনালটিতেও ফিরেছে সৌন্দর্য।

বাস মালিক গ্রুপ, শ্রমিক ইউনিয়নসহ ছোট-বড় সব পরিবহন নেতৃবৃন্দের সাথে ট্রাফিক পুলিশের সমন্বিত বৈঠকে শৃঙ্খলা ফিরেছে একসময়ের যানজটে নাকাল এই স্থানটিতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে যাত্রীবাহী বাসগুলো শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পার্কিং করা আছে।এছাড়া যানজট এড়াতে মাইক্রোবাসগুলোকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখা হয়েছে। থ্রি-হুইলারকে রাখা হয়েছে সারিবদ্ধভাবে।

পূর্বে থ্রি-হুইলার (আলফা-মাহিন্দ্রা সড়কের অর্ধেকজুড়ে অবস্থান নিলেও বর্তমানে সেটিও রয়েছে অল্প পরিসরে। তারা সারিবদ্ধভাবে একপার্শ্বে একলেনে সুশৃঙ্খলভাবে রেখেছে। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় এ বাস টার্মিনালে ফিরেছে কিছুটা স্বস্তি।

এদিকে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও সড়ক আইন অমান্যকারী যেকোনো পরিবহনকেও আইনের আওতায় সহজেই নিয়ে আসা হচ্ছে। ইতিবাচক এ কাজে ট্রাফিক পুলিশদের সহায়তা করে যাচ্ছে বাস মালিক গ্রুপ, সব ধরনের পরিবহনের শ্রমিক ও ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দও।

আর এতে করে সড়ক আইন মান্যকরণ সহ যানজট মোটামুটি শূন্যের কোঠায় চলে এসেছেই বলা চলে।  বর্তমানে জেলা বাস মালিক গ্রুপ টার্মিনালের শৃঙ্খলাসহ সর্বদিক ইতিবাচক ধারায় পরিচালনা করছেন। গ্রুপের সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টায় শৃঙ্খলা ফেরাতে অবদান রাখছেন তারা। যাত্রী সেবা উন্নীতকরণ ও যানজট নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বাস মালিক গ্রুপের সমন্বিত উদ্যোগের সুফল ভোগ করছে যাত্রীসহ সকলে। ট্রাফিক, সেনাবাহিনী, শ্রমিক ইউনিয়ন বাস মালিক গ্রুপের সাথে ভোগান্তি লাঘবে যৌথভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।

যার ফলস্বরূপ দীর্ঘ যানজটের নথুল্লাবাদের এ টার্মিনালে মুক্ত হয়েছে যানজট। ফিরে এসেছে সৌন্দর্য। আর এতে স্বস্তি পেয়েছেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সদস্য মোশারফ হোসেন জানান, যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বাস মালিক গ্রুপ ও শ্রমিক ইউনিয়ন এক্ষেত্রে অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

টার্মিনালের বিএমএফ কাউন্টার থেকে আল্লাহর দান রেস্তোরাঁ পর্যন্ত যত অবৈধ দোকানপাট ছিল যানজট নিরসনে সেগুলো সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এতে যানজটের মাত্রা কমে এসেছে। ইতিবাচক এ কাজে শুধু বাস মালিক গ্রুপই না নিরলস কাজ করছে শ্রমিক সংগঠনও। টার্মিনালের মধ্যেও সুশৃঙ্খলা ফেরানো হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত পার্কিং সংকট রয়েছে। এর মধ্যেও আমরা ইতিবাচক নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সংকট নিরসনের জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেনাবাহিনীসহ ট্রাফিকের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে আমাদের সহায়তা করে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের টার্মিনালের পিছনে অনেক জায়গা রয়েছে। যাত্রী সেবা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে কিছু জায়গা সরকার বাড়ালে এ সংকট আর থাকবে না। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করবো।  

বর্তমানে যানজট নিয়ন্ত্রণে যাত্রীদের স্বস্তি ফেরাতে আমরা জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যার ফলস্বরূপ যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।  

মোশারেফ বলেন, যাত্রী সেবা উন্নীতকরণে আমাদের জোর পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। কোন যাত্রী যাতে হয়রানি না হয় ও যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন এজন্য সকলকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। টার্মিণাল কাউকেই অবৈধ কোন কার্যক্রমের সুযোগ দেয়া হবে না। কেউ এসব কাজে জড়িত থাকলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটিতে যানজট মুক্তের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ধারায় পৌঁছানোর বেশিরভাগ কৃতিত্বই মেট্রোপলিটন পুলিশকে দিচ্ছেন সচেতন মহল।

কারণ যোগদানের পরপরই মহানগরীর যানজটের অবস্থা বেহাল লক্ষ করে  মুক্তকরণে কঠোর নির্দেশ দেন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম।

এনিয়ে তিনি এক বিশেষ সমন্বয় সভার সভাপতিত্ব করেন কমিশনার শফিকুল ইসলাম। ঐ সময়ে তিনি  ট্রাফিক ডিভিশন, ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আওতায় মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত অফিসার ফোর্সদের শতভাগ পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সাথে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে মহানগরীকে যানজট মুক্তকরণে নির্দেশ প্রদান করেন।

একইসাথে সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আরো কার্যকর ও শক্তিশালী করতে ট্রাফিক ডিভিশন, থানা ও ডিবি পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রাখারও নির্দেশ দেন। যার ফলস্বরূপ যৌথ সমন্বিত উদ্যোগে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরে নথুল্লবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালেও।

ট্রাফিক পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বরতরা শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় এ বাস টার্মিনালের বাস মালিক গ্রুপ, শ্রমিক ইউনিয়ন, থ্রি-হুইলার ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে পর্যায়ক্রমে সমস্যা সমাধানকল্পে বৈঠক করেন। তাদের সহযোগিতায় ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দূরদর্শী হস্তক্ষেপে বর্তমানে এ স্থানটিতে যানজট শূন্যের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বরিশাল কেন্দ্রীয় এ টার্মিণালে বর্তমানে ৯ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নিয়ে নিরলস কাজ করছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মামুন আল আমিন।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যানজট নিয়ন্ত্রণে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও সেটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অনবধ্য কাজ করে যাচ্ছেন ট্রাফিকের এ পুলিশ কর্মকর্তা। সড়কে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শৃঙ্খলার স্থানে পরিবহন পার্কিং ও চলাচলের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। যাত্রী ও সাধারণের ভোগান্তি লাঘবে বিরামহীন এ প্রচেষ্টায় নিজের কৌশলকেই হাতিয়ার হিসেবে সড়কে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।  

তার এ দূরদর্শী দায়িত্ব পালনে সকাল থেকে রাত অবধি একসময়ের যানজটের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত টার্মিণালটিতে চিনতে পারছেন না যাত্রীরা।  

ঢাকামুখী এক যাত্রী ফিরোজ জানান, কেন্দ্রীয় এ বাস টার্মিণালটিতে ইতঃপূর্বে যানজট লেগেই থাকতো। দুই পা হাঁটার জায়গা ছিলনা। গাড়ির দীর্ঘ যানজটে সড়ক পারাপারেও ভোগান্তি ও ভয় যেন লেগেই ছিল। কিন্তু এখন এসে অবাক হলাম। এককথায় চিনতে পারছি না এ টার্মিনালকে। যানজট নেই বললেই চলে। ট্রাফিক পুলিশের বিরামহীন ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ভোগ করছি। দায়িত্বরত সব ট্রাফিক পুলিশ সদস্য একইসাথে বাস মালিক গ্রুপকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এদিকে হর্নের মাত্রাও সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। ভোগান্তির আরেক নাম এ স্থানটিতে যানজটের পাশাপাশি বিরামহীন হর্ন বাজিয়ে পরিবেশ ও যাত্রী সাধারণের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও ছিল চরমে। কিন্তু বর্তমানে সেই হর্নের মাত্রাও কমে এসেছে। এতে যানজট ও উচ্চশব্দ বিহীন সৌন্দর্য ফিরে এসেছে কেন্দ্রীয় এ টার্মিনালটিতে।  

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্ট (টিআই) মামুন আল আমিন জানান- নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটিতে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকের ৯ জন পুলিশ সদস্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। যানজট এড়াতে সড়কজুড়ে ছোট-বড় পরিবহন পার্কিং প্রতিরোধে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সব সদস্যদের সাথে আমরা বৈঠক করেছি। যানজট এড়াতে তাদের আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তাদের সাথে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সড়ক থেকে এসব যানবাহন সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের সাথে থানার একটি টিমও কাজ করেছে। সব-মিলিয়ে সকলের সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগে এ স্থানটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।  

এছাড়া সড়ক আইন অমান্যকারীকেও যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সকলের সহায়তাও পাচ্ছি।  

তিনি আরও বলেন, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে কোনো সিন্ডিকেট নেই। সম্পূর্ণ চাঁদা মুক্ত এ টার্মিনালটি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। মাননীয় পুলিশ কমিশনার স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। স্যারের নির্দেশক্রমে আমরা নতুন উদ্যোমে কাজ করছি। সড়কও  টার্মিনালে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি। সবমিলিয়ে এ স্থানটিতে যানজট নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। আর আমাদের এ ইতিবাচক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, নগরীজুড়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।সমন্বিত উদ্যোগে গুরুত্বপুর্ণস্থানগুলোতে যানজট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারাভিযান, যথাযথ আইনি ব্যবস্থাসহ সবধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নীতে জনগণের ভোগান্তি লাঘবে আমরা পর্যায়ক্রমে সব ইতিবাচক কার্যক্রমের উদ্যোগ ও সেটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করবো।

বিআরইউ