রাজনীতির প্রথম জীবনে ইউপি নির্বাচনে ফেল করার পর থেকেই রীতিমতো মাফিয়া ডনে পরিণত হন ভোলা- ২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলি আযম মুকুল।
পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানে) ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে মুকুল ও তার বাহিনী। সেখানে তার কথাই ছিল আইন। টানা ১৭ বছর তৎকালীন বিরোধী দল এমনকি আওয়ামী লীগের একটি অংশও ছিল ঘরবাড়ি ছাড়া। নির্বিচারে গুম, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, দখলবাজিতে অতিষ্ঠ ছিল স্থানীয় বাসিন্দারা।
মুকুল ও তার বাহিনীর ক্যাডারদের কাছে প্রশাসনও ছিল জিম্মি। তার ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী থাবা থেকে রক্ষা পাননি আলেম-উলামা,পীর মাশায়েখ থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম, স্কুল কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তার বশ্যতা স্বীকার না করলেই তাকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে।
অনেকেই চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজনসহ প্রাণ নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তার কথাই ছিল সেখানকার আইন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন এক বিপ্লবে হাসিনা দেশ থেকে পালানোর ৩ মাসের অধিক সময় পর গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে মুকুলকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। ঢাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক খুনের অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে সে সীমান্ত দিয়ে কয়েকবার ভারতে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তার গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) জনসাধারণের মাঝে খুশির জোয়ার বইছে, তাদের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার ভোলা- ২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) এলাকার জনসাধারণের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ৯০ দশকে তার চাচা কুখ্যাত তোফায়েল আহমেদের ছত্রছায়ায় ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতির প্রথম জীবনে নিজ ইউনিয়নে ইউপি সদস্য পদে ভোটে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।
এরপর তার চাচার প্রভাব খাটিয়ে দৌলতখান পৌরসভার কোটায় মেয়র হন, ২০১৪ সালে বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন বিনা ভোটের সাবেক কথিত এমপি আলী আজম মুকুল বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, সাংবাদিক নির্যাতন, সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দেয়াসহ নানাভাবে দমনপীড়ন করে লুটপাটের মাধ্যমে এক একজন কোটিপতি বনে যান।
এছাড়াও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলীয় সাবেক এমপি আলহাজ্ব হাফিজ ইব্রাহীমের বাসায় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা, বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীর নামে ডজনখানেক মামলা দিয়ে হয়রানি করা, ২০২২ সালে ভোলা সদরে হোটেল প্যাপিলনে তাকে হত্যার চেষ্টা করাসহ নানা অপকর্মের মূল হোতা এই মুকুল।
আওয়ামী লীগের যারা তার বশ্যতা স্বীকার করেনি তাদেরও নির্যাতন করে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বিরোধী দলের এবং হিন্দুদের বাড়ি জমি দখলের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করার ও অভিযোগ আছে। এসব ঘটনায় তখন সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো মামলা নেয়া হয়নি।
বিগত পনেরো বছর ভোট ছাড়াই এমপি হয়েছেন মুকুল। ভোলা-২ আসনে হাসিনার ভোট চুরি আর ভোটারবিহীন নির্বাচনের মডেল দাঁড় করান মুকুল। বিগত দেড় দশকে সেখানে স্থানীয় সরকারের কোন নির্বাচন হয়নি, ইউপি, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা মুকুল তার প্রার্থীদের বিনা ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তার দলের নেতারাও তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারতেন না।
ইএইচ