রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র। মূলত প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি স্থাপিত হয়।
তবে সেখানে ওষুধ ও চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজন সাধারণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ ইউনিয়ন সেবা ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ জন প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসে। কিন্তু তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন রকম সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানের নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ফলে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে গিয়েও সেবা না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ জনগণকে। আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিদিন খোলা হলেও সরকারি রুটিন অনুযায়ী সেখান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেন না অফিস। নির্দিষ্ট সময়ের পরে অফিস খুলে তারা বন্ধ করে চলেও যায় অনেক আগেই।
এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিয়মিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনের কথা থাকলেও কয়েক মাসেও তিনি কোনো খোঁজখবর নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। নানা রকম অনিয়ম, চিকিৎসক না থাকাসহ পর্যাপ্ত জনবল ও আসবাবপত্রের সংকটের কারণে বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
পাকড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ব্যবহার অনুপযোগী টয়লেট ও আসবাবপত্রেরও রয়েছে চরম সংকট। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা এক গর্ভবতী নারী বললেন, আমাদের মতো অনেক গর্ভবতী নারী এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। কিন্তু একটিমাত্র টয়লেট আছে, আর সেটি এতটাই নোংরা, সেখানে প্রবেশ করাই দায়। অনেক সময় প্রসাব পরীক্ষার জন্য টয়লেটটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটি ব্যবহার অনুপযোগী। যা দেখার কেউ নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেবাদানকারী ফার্মাসিস্ট মাসুম আলী সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রবেশ করেন। অথচ তার সেখানে আসার কথা ছিল সকাল ৯টায়। এদিকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইকবাল হোসেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আসেন ১১টায়। আর এক ঘণ্টা থাকার পর তিনি তার আত্মীয় অসুস্থতার কথা বলে কেন্দ্র ত্যাগ করেন। মিডওয়াইফ নার্স ইসমত আরা এসেছেন সকাল ১০টায়।
পাকড়ী পশ্চিম পাড়া গ্রামের বেণু বেগম (৬০) বলেন, এখানে আমি কোমরের ব্যথা নিয়ে এসেছি। কিন্তু কেবল প্যারাসিটামল ও হিস্টাসিন দিয়েই চিকিৎসা শেষ। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ফার্মাসিস্ট মাসুম আলী বলেন, ‘এখানে গড়ে প্রতিদিন ৬০-৭০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রতি তিন মাস অন্তর ওষুধ বরাদ্দ হয়। হয়ত কিছু ওষুধ শেষের দিকে কম হয়ে যায়। তখন ওষুধ ভাগ করে দিতে হয়। এজন্য অনেক সময় অতিরিক্ত লোকজন আসলে মাসের শেষের দিকে কিছু ওষুধ সংকট হয়।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভ্যন্তরে দোকান কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, এটি স্থানীয় রাজনীতির কারণে হতে পারে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী মাজরুই রহমান বলেন, ওষুধ যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া আছে তাতে যথেষ্ট চিকিৎসাসেবা পাবে রোগীরা। তারপরও কেন ওষুধ ও চিকিৎসা পাচ্ছে না, খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর ভবনে ফাটলের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
ইএইচ