ক্রীড়াপ্রেমী জেলা প্রশাসকের আশ্বাস আর হাফিজের স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ নেওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া সুবলং চ্যানেল সুইমিং এর পুরস্কার ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান বক্তব্যের একপর্যায়ে সাতারুদের উদ্দ্যেশে বলেন, বিজয়ীদের মধ্যে কেউ ইংশিল চ্যানেল পাড়ি দিতে চাইলে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে এখানকার মানুষের মতো আমারও ভীতি ছিল। আজ থেকে তা কেটে গেছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে এ আয়োজন করা হবে।
জেলা প্রশাসকের এমন আশ্বাসে বুকভরে-চোখজুড়ে স্বপ্ন দেখছেন সুইমিং এ অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ীদের মধ্যে ৪র্থ স্থান অর্জন করা হাফিজুর রহমান। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন সাঁতার প্রতিযোগিতায় বাংলা চ্যানেলে প্রতিযোগী হয়ে পাহাড়ের নাম সমুন্নত করা। যথাযথ আর্থিক সহায়তা ও সরকারিভাবে পরিচর্যা পেলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন বলে জানান হাফিজ।
হাফিজ পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলাধীন মাইনীমূখ ইউনিয়নে গাঁথাছড়ার বড় কলোনী এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে। তিনি বর্তমানে রাঙামাটি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এর আগেও উপজেলা-জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সাঁতারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের রেকর্ড রয়েছে। পাশাপাশি বাংলা চ্যানেলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে গতবছর একই সময়ে ২য় বর্ষের পরীক্ষা থাকায় বাংলা চ্যানেলে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এছাড়া পিছিয়ে পড়ছেন আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেও এমনটাই বলছেন তিনি। তবে আঁধার কেটে যেন আলো আসছে জেলা প্রশাসকের কথায়। এবার প্রতীক্ষিত লক্ষ্যে এগোবার পালা। বাংলা চ্যানেল সাঁতারে জেলা প্রশাসক সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে আশা করছেন হাফিজ।
‘কাপ্তাই লেকে কাটবে সাঁতার, ভয় করবে জয়, নিয়মিত কাটলে সাঁতার স্বাস্থ্য ভালো রয়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় কাপ্তাই হ্রদে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে সুবলং চ্যানেল সুইমিং।
শনিবার সকালে সুবলং আর্মি ক্যাম্পে চেকপোস্ট থেকে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কাপ্তাই হ্রদের ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার পথ সাঁতরে পাড়ি জমাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বেঙ্গল ডলফিন’স সাঁতারু দলের এক নারীসহ মোট ২৬ জন প্রতিযোগী। শহরের শহিদ মিনার ঘাটে এসে প্রতিযোগিতা শেষ হয়।
এ প্রতিযোগিতায় জেলার লংগদু উপজেলা থেকে একমাত্র প্রতিযোগী হাফিজ চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাপ্তাই হ্রদে প্রতিবছর পানিতে ডুবে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। কাপ্তাই হ্রদে সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনের কারণে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের সাঁতার শেখাতে উদ্বুদ্ধ হবেন।
এছাড়া হাফিজের চাওয়া যারা প্রকৃত সাঁতারু তাদের জন্য সরকারিভাবে দেশ-বিদেশে সুইমিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন সহায়তামূলক উদ্যোগ নিলে ক্রীড়াঙ্গনের এদিকটা আরও এগিয়ে যাবে এবং একই সাথে বাংলা চ্যানেল পেরিয়ে ইংলিশ চ্যানেল অবস্থান হবে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কিন্তু হ্রদ কেন্দ্রিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের কোনো আয়োজন না থাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে অনেকটাই পিছিয়ে। তবে এই ধারা ভেঙে প্রথম বারের মতো রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কাপ্তাই হ্রদে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এই প্রতিযোগিতা।
রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, আমি রাঙামাটিতে যোগদান করার পর থেকেই সাঁতারকে জনপ্রিয় করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেই প্রচেষ্টা থেকেই আজকের আয়োজন।
উল্লেখ, এ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন বরগুনার মো. সাইফুল ইসলাম রাসেল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে সাতক্ষীরার মো. তৌফিকুজ্জামান এবং বগুড়ার এস আই এম ফেরদৌউস আলম। এছাড়াও পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার জয়তু দাশ ৫ম ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রাজেশ চাকমা ৭ম স্থান অর্জন করেন।
বিআরইউ