কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধ সমাধি) থেকে ২৪ জন জাপানি সৈনিকের সমাধি খনন চলমান আছে।
মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে ১২টি এবং আংশিকভাবে আরও ৫টি সমাধি খনন করে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ হিসেবে মিলেছে কারও মাথার আংশিক খুলি কারও শরীরের বিভিন্ন হাড় আবার কারও দাঁত।
মঙ্গলবার দুপুরে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কবর খনন বিশেষজ্ঞ জাপানের ফরেনসিক দলকে সহায়তাকারী মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক।
সংবাদ সম্মেলনে জাপানি টিম লিডার ইনোওয়ে হাসোয়েকি বলেন, ফরেনসিক দল এই ২৪ জন সৈনিকের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম মনিটরিং করছে টোকিও। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় দেহাবশেষগুলো জাপানে নেয়া হবে। সৈনিকদের পরিবারগুলো এমন উদ্যোগে আপ্লুত। তারা অপেক্ষায় আছেন। প্রিয়জনের প্রতি এ এক অন্য রকম অনুভূতি। তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। দেশে ফিরিয়ে নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর দেহাবশেষগুলো নিজ নিজ স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
লে. কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ৮১ বছর পরও সৈনিকদের শরীরের বিভিন্ন হাড় আমরা পাচ্ছি। এর কারণ হচ্ছে যেখানে সমাধি গুলি করা হয়েছে তা অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমিতে। কখনোই পানি আসেনি। অত্যন্ত সাবধানতার সাথে কিছুটা এক্সকেভেটর এবং বাকিটা ম্যানুয়ালি অত্যন্ত সতর্কতার আমরা খনন কাজ করছি। পুরো কাজ যথাসময়েই শেষ করার আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, ২৪ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় অজ্ঞাত। খনন করে সমাধি থেকে যতটুকু হাড় ও বিভিন্ন আলামত পাওয়া যাচ্ছে তা ডিএনএ প্রোফাইল হিসেবে অনেক সহায়ক হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেস মাইকেল ও টিমের সমন্বয়ক সাদিক হোসেন রানা উপস্থিত ছিলেন। তবে খনন কাজ চলমান থাকায় নিরাপত্তার কারণে সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি। এ ওয়ার সিমেট্টিতে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৩টি দেশের ৭৩৮ জন সেনাকে এখানে সমাহিত করা হয়।
এর আগে ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষ তাঁর স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে এখানে ৭৩৭ জন সৈনিকের দেহাবশেষ থেকে যায়। এর মধ্যে জাপানের আছেন ২৪ জন। কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন এই যুদ্ধ সমাধি ক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
ইএইচ