যশোরের অভয়নগর উপজেলার মৃৎশিল্পের ইতিহাস ও সুনাম অনেক প্রাচীন। একসময় উপজেলার চলিশিয়া গ্রামের কুমারদের হাতে তৈরি মাটির জিনিস পত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজারেও পাওয়া যেত এই মৃৎশিল্প। বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমাররা এ পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত।
কিন্তু কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।
জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছিল মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পীরা মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, ঢাকনা, কলসি, ছোট বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রীসহ প্রভৃতি তৈরি করত। তাদের তৈরি পুতুল বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। কিন্তু নানা প্রতিকূতায় মৃৎশিল্প বিপন্ন হতে না হতেই ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এই শিল্প।
বর্তমানে নানা প্রতিকূলতা ও অভাব অনটনের কারণে মৃৎশিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী বাপ দাদার আদি পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র।
অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্রের দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই হয়। এজন্য সেটি বাজার দখল করে নিয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার চলিশিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পালবাড়ি এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার রয়েছে। পাড়ার সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। তাদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। এখন মাত্র কয়েকটি পরিবারের কারিগরেরা বাপ দাদার আদি পেশা কোনো মতে আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের পেশার দৈন্যদশার সঙ্গে সঙ্গে সংসার জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
অর্চনা পাল, শামিত্রি পাল, ববিতা পাল এরা কেউ প্রতিমা আবার কেউ ছোট হাঁড়ি তৈরি করছেন।
উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের পালবাড়ি এলাকার অর্চনা পাল বলেন, প্লাস্টিকের যুগে এখন আর মাটির জিনিসের তেমন গুরুত্ব নেই বাজারে বা মানুষের কাছে। আমরা মাটি দিয়ে যেসব জিনিস বানায়, সেগুলো আর আগের মত বেচতে পারিনি। কী করব অন্য কাজ কাম করতে পারিনি। তাই বাপ দাদার পেশা আঁকড়ে ধরেই আছি। এখন আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। সেটা দেখার কেউ নেই।
উপজেলার চলিশিয়া গ্রামের মৃৎশিল্পের কারিগর বিষ্ণুপাল বলেন, মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দাম কম থাকায় এখন ধীরে ধীরে এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও বাপ দাদার কাজ ছাড়তে পারিনি আমরা। তাছাড়া ছোট থেকে এই কাজ বাদে অন্যকাজ পারতে পারি না। তাই এই কাজ নিয়ে পড়ে আছি। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা থাকলে হয়তো শেষ রক্ষে পেত।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃৎশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি কোনো সহযোগিতা আসলে তাদেরকে দেয়া হবে।
ইএইচ