ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়ন জাফরাবাদ নতুনচর মৌজা মেঘনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে দিনে এবং রাতে চলছে বালু উত্তোলন।
এই বালু মহালের ইজারাদার ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন এবং সহযোগী হিসাবে অংশীদার বড়িকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চেয়ারম্যান লাল মিয়া।
স্থানীয় লোকজন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কৃষিজমি, বসতভিটা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরি ৭২ কোটি টাকা বেড়িবাঁধ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা প্রশাসনকে বারবার জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন টাকা দিয়ে অবৈধভাবে দিনে এবং রাতে ৭০-৮০টি ড্রেজার মেশিন বালু উত্তোলন করছে। তিন ইউনিয়নে মহাল বন্ধের জন্য মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।
গ্রামবাসী বলেন, এক মহাল ইজারা এনে তিন ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। প্রায় শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধের ৫০ ফুট এলাকাজুড়ে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষজন।
উপজেলার ধরাভাঙ্গা, মুক্তারামপুর, বীরগাঁও, চর লাপাং, সলিমগঞ্জ, মানিকনগর, সোনাবালুয়া, নুরজাহানপুর, বড়িকান্দি গ্রামে প্রায় ১০০ বছর ধরে মেঘনা নদীর ভাঙনে ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর হারিয়ে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। এসব গ্রামের ভাঙনরোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। সেখানে ইজারাদার বিআইডব্লিউটিএর হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের নিয়ম অমান্য করে ৩২ একর জায়গায়সহ বাঁধের তীর ঘেঁষে ১০০-১২০ ফুট গভীরতা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছেন।
প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০টি খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে গড়ে ৩০-৪০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছেন। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের ফলে সেখানে বালুশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে জাফরাবাদ মৌজার নতুনচর এলাকায় বেশ কিছু কৃষকের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনরোধের বাঁধও এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া নদীতীরবর্তী বসতবাড়িসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
তিন ইউনিয়ন থেকে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, গোলাম কিবরিয়া, ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন, সুজন, সমাজ সেবক নোয়াব আলী, সমাজ সেবক রবিউল্লাহসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ শোভনের মালিকানাধীন মুন্সি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালুমহালটি ইজারা পায়।
ইএইচ