মোটরসাইকেলকে হার্লি ডেভিডসনের রূপ দিল আজিম মিয়া

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম

বিশ্বের অন্যতম সেরা বাইক হার্লি ডেভিডসন নিয়ে ছুটছেন যুবক। দূর থেকে দেখলে এমনটি ভেবে নিতে পারেন যে কেউ। তবে আসলে এটি একটি পরিত্যক্ত জিনিস দিয়ে তৈরি করা মোটরসাইকেল। আর এ মোটরসাইকেল তৈরি করে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন আজিম নামের এক যুবক।

তিনি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বাবনা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মাত্র ৪০ হাজার টাকা খরচ করে চার-পাঁচ লাখ টাকার মোটরসাইকেলে রূপ দিয়েছেন। যা এলাকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এলাকা ও আশপাশ থেকে হার্লি ডেভিডসন নামক বাইকটি দেখতে আসছেন তার বাড়িতে।

অনেকে বাইকের সঙ্গে সেলফিও তুলছেন।

সরেজমিনে আজিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে গিয়ে আজিম ও তার বাবার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আজিমের স্বপ্ন ছিল মোটরবাইক কেনার। কিন্তু অনটনের সংসারে সেই স্বপ্ন বাস্তব করা দুঃসাধ্য। তবে ইচ্ছে থাকলে দুধের স্বাদ ঘোলেও যে মেটানো যায় তারই যেন উদাহরণ আজিমের হার্লি ডেভিডসন। আর এ কাজে আজিমের পাশে থেকে সহযোগিতা করেন তার বাবা আ. মান্নান। মোটরসাইকেলের অবয়ব তৈরি করতে প্রথমেই লাগানো হয়েছে জেনারেটর ইঞ্জিন। পরে বিভিন্ন রড হাইসের চাকা অটোর চাকা দিয়ে বাইকের বডি তৈরা করা হয়। বিভিন্ন উপকরণে তৈরি এই মোটরসাইকেলটি দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। তার এমন সৃষ্টিকর্মে খুশি সবাই।

আজিম জানান, প্রায় দেড়মাস পরিশ্রম করার পর মোটরবাইকের আদলে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই সময়ে প্রতিদিন কাজের ফাঁকে সময় বাঁচিয়ে মোটরসাইকেল তৈরিতে সময় দেন তিনি। বাইকটির পুরো কাজ কমপ্লিট হতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হবে। আর এখন এই মোটরবাইক দিয়েই বাড়ি থেকে বিভিন্ন কাজকর্মে যাচ্ছেন, বাজার করেন ঘুরতেও বের হন।

মাত্র ১ লিটার পেট্রোল খরচ করে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন। গ্রামটির আজিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ দু চাকা স্বপ্নের মালিক আ. মান্নান মিয়ার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় আজিম।

স্থানীয় আলিয়া মাদরাসায় অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছেন। পড়াশুনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। ছোটবেলা থেকেই উদ্ভাবনী শক্তি প্রকট আজিমের। ফেলে দেওয়া নানা জিনিস থেকে বানিয়ে ফেলতেন নানা খেলনা ও উপকরণ। নিজের তৈরি করা খেলনা দিয়েই খেলতেন তিনি।

ল্যাম্বারগিনি গাড়ির আদলে গাড়ি, নৌকা, বিভিন্ন প্রতিকৃতি তৈরি করছেন অনেকদিন ধরে। যার সব কিছুই সখের বসে।

আজিমের বাবা আ. মান্নান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আজিম পড়ালেখার পাশাপাশি নানা জিনিস বানাতো। আমার ছেলে পরিত্যক্ত জিনিস দিয়ে বাইক বানিয়েছে, মানুষ দেখতে আসছে খুব ভালো লাগছে।

আজিমের মামা মো. মিজানুর রহমান সুজন বলেন, পড়ালেখা ও কাজকর্মের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় জিনিস বানানো নিয়ে আজিম ব্যস্ত থাকায় খুব রাগ হতো। কিন্তু তার এ ধরনের প্রতিভাতে আমি এবং এলাকার মানুষ অত্যন্ত খুশি।

স্থানীয় সদর ইউপি সদস্য বরুণ কুমার সাহা (সাগর) আমার সংবাদকে বলেন, অনেক ধরনের প্রতিভা গ্রামে লুকিয়ে থাকে। আজিমের প্রতিভা দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হতে পারে। সরকারি পর্যায় থেকে তাকে সহযোগিতা করলে ভালো কিছু হতে পারে।

ইএইচ