গরুর পরিবর্তে অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানছেন হামিদুল

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৩:১১ পিএম

প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু দিয়ে তেলের ঘানি টানতে দেখা গেছে। মানুষ এখন আধুনিক যুগে যান্ত্রিক সভ্যতায় মিশে বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে তাদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে।

বিভিন্নজন এ যন্ত্রকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টেনে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে কুড়িগ্রামের হামিদুল।

জানা যায়- কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের উত্তর সিতাইঝাড় গ্রামের হামিদুলের বাপ-দাদা প্রায় ৮০ বছর গরু দিয়ে তেলের ঘানি টেনে ব্যবসা করেছে। বাপ-দাদার পর হামিদুল দুটি গরু কিনে এই ব্যবসার হাল ধরেছিলো। কয়েক বছর ঐ গরু দিয়ে তেলের ঘানি টেনে সংসার চালায়।

এরপর ২০২৩ সালে বন্যার সময় একটি গরু মারা যায়। তখন হামিদুল বাকি একটি গরু বিক্রি করে ঘোড়া ক্রয় করে। কিছুদিন পর ঐ ঘোড়া বিক্রি করে দেয়।

পরে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি অটোরিকশা (ব্যাটারি চালিত) ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করেন। এ পদ্ধতিতে তেল উৎপাদনে সময় কম লাগে আর খরচ অনেক কম হওয়ায় বেশ লাভের মুখ দেখেন।

প্রথমে হামিদুল কিছুদিন নিজগ্রামে ঐ অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানার ব্যবসা করেছিল। কিন্তু গ্রামে বেশি বিক্রি না হওয়ায় তখন শহরমুখি হন হামিদুল। এরপর বেলগাছা ইউনিয়নের ত্রিমোহনীতে দোকান দেয়। সেখানেও ব্যবসা ভালো না চলায় চলে আসে শহরের ব্যস্ততম এলাকা কলেজ মোড়স্থ কুড়িগ্রাম প্রধান ডাকঘরের সামনে। এখানে মানুষ ছাড়া অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানা দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক ভিড় জমায়।

চোখের সামনে গাছ মারা তেল ভাঙতে দেখে অনেকে ক্রয় করছেন।

অটোরিকশা দিয়ে তেলর ঘানি টানা ব্যবসায়ী হামিদুল বলেন, আমার বাবার তেলে ঘানি টানা জন্মগত পেশা। আমি জন্মের পর থেকে দেখে আসছি বাবা খুবই কষ্ট করে গরু দিয়ে ঘানি টেনে তেলের ব্যবসা করেছে। বাপ-দাদা কয়েক যুগ গরু দিয়ে তেলের ঘানি টেনেছেন। আমি বাবার পেশা ধরেছিলাম। প্রথমে একজোড়া গরু দিয়ে অনেক বছর ব্যবসা করি। পরে ২০২৩ সালের বন্যায় একটি গরু মারা যায়। সংসারে অভাব দেখা দিলো। বাধ্য হয়ে বাকী গরুটি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনে তেলেরে ঘানি টানা শুরু করি। কিন্তু ঘোড়ার খাদ্য দিতেই আমার সংসার চলে না। তাছাড়া গরু বা ঘোড়ার সাথে ঘানির সাথে ঘুরতে আমারও অনেক কষ্ট হতো। একদিন ইউটিউব দেখে আমার মাথায় চিন্তা আসে অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানার। এরপর ঘানি টানা ঘোড়া বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি অটোরিকশা (ব্যাটারি চালিত) ক্রয় করি। ছেলেকে সাথে নিয়ে শুরু করি অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানা ব্যবসা।

এ পদ্ধতিতে যেমন শারীরিক পরিশ্রম কম লাগে অন্যদিকে তেল উৎপাদনের সময় কম লাগে। অটোরিকশাটি রাতে চার্জ দিয়ে দিনে টানা ৮-৯ ঘণ্টা ঘানি চালানো যায়। বর্তমানে অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে প্রতিদিন ৪০ কেজি সরিষা থেকে ১০থেকে ১২ লিটার তেল উৎপাদন করা যায়। তেলের ঘানি টানতে যেভাবে গরু চারিদিকে ঘুরতো ঠিক অটোরিকশার সুইচ অন করলেই গরুর বা ঘোড়ার মত ঘুরতে থাকে। আগে গরু দিয়ে ৭-৮ ঘণ্টায় যে তেল উৎপাদন করতাম এখন ৩-৪ ঘণ্টা লাগে। এতে গরু বা ঘোড়ার চেয়ে অটোরিকশা দিয়ে তেল উৎপাদন করে অনেক লাভবান হয়েছি। আর উৎপাদিত প্রতি লিটার তেল খুচরা ৪০০ টাকা এবং খইল ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে ৭-৮ শ টাকা আয় হয়। এই ব্যবসা দিয়ে আমার সংসারের ছয়জন সদস্যের ভরণ-পোষণসহ ছেলে- মেয়ের লেখাপড়া খরচ জোগাড় করতে হয়।

ইএইচ