নোয়াখালী-কুমিল্লা মহাসড়কের অদূরে টিনের প্রাচীরে ঘেরা এলাকা। বাইরে নেই কোন সাইনবোর্ড। প্রাচীরের গেটে সার্বক্ষণিক পাহারায় দারোয়ান। যেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে দুইটি বিশালাকৃতির রুমে উৎপাদন চলছে কারেন্ট জাল ও পলিপ্রোপাইলিনের তৈরি বিভিন্ন পণ্য। এভাবেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধ ভাবে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী কারখানা।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মজুমদারহাট পূর্ব খালপাড়ে গত একবছর থেকে উৎপাদন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন অবৈধ এই কারখানা। যেখানে তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন, কারেন্ট জাল ও প্লাস্টিকের দড়ি। একবছর থেকে কার্যক্রম চালালেও কিছুই জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির কোল ঘেঁষে টিন দিয়ে ঘেরা ফটক বন্ধ প্রাচীর। নানা জেরা শেষে গেটের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় প্রতিবেদককে। শর্ত উৎপাদন চলা কারখানার কোন ছবি-ভিডিও নেওয়া যাবে না। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে কারখানার ভেতরে নেওয়া হয়। সেখানে পলিপ্রোপাইলিন দিয়ে তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের সুতা ও পলিথিন সামগ্রী। দুইটি বিরাট রুমের ভেতরে বড় বড় মেশিনে উৎপাদন হচ্ছে নিষিদ্ধ এসব পণ্য। নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা অথবা জরুরি নির্গমন পথ। বদ্ধ কারখানার ভেতরে কাজ করছে শিশু ও মহিলারা। এছাড়া উৎপাদন কাজ চালানোর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্রও দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।
স্থানীয়রা জানান, এই কারখানার কোনো দরজা-জানালা নেই। ভেতরে কি চলে তারা কিছুই জানেন না। ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। চৌমুহনী এলাকা থেকে এসে কয়েকজন মহিলা ও অল্পবয়সী বাচ্চারা সকালে এর ভেতরে ঢোকে আর রাতে বেরিয়ে যায়। তবে তারা শুনেছেন ভেতরে প্লাস্টিকের জাল-পলিথিন তৈরি হয়।
প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন মালিকের ছোটভাই নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, কারখানার নাম `সাইফুল ফাইবার`। এটির মালিক বড় ভাই সাইফুল ইসলাম। নোয়াখালী চৌমুহনীর বিসিক শিল্প এলাকায় `নোয়াখালী প্লাস্টিক` নামের তাদের আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মজুমদারহাটের এই কারখানায় প্লাস্টিকের দড়ি, জাল ও কার্টুন বাঁধার ফিতা তৈরি করা হচ্ছে। তবে সেখানে একটি গোডাউনে পলিথিন তৈরির কাঁচামাল (প্লাস্টিক দানা) মজুদ থাকতে দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানের বৈধতা ও পরিবেশগত ছাড়পত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বড় ভাই সাইফুলের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
মুঠোফোনে সাইফুল ইসলামের সাথে কথা হলে আমার সংবাদকে জানান, মজুমদারহাটের কারখানার বৈধ কাগজ নেই। কাগজ-পত্র তৈরির চেষ্টা করছেন। কারখানায় প্লাস্টিকের দড়ি উৎপাদন করছেন। বর্তমানে সবাইকে ম্যানেজ করে কোনোরকমে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের কারখানার তথ্য তার কাছে নেই। পরিবেশ বিধ্বংসী কোনো কারখানা থাকলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারা অভিযান পরিচালনা করলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল জানান, মজুমদারহাট এলাকায় `সাইফুল ফাইবার` কিংবা অন্য কোন নামের কোন কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে পলিথিন উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সকল অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
বিআরইউ