ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জি কে গউছের

মীর মো. আব্দুল কাদির, হবিগঞ্জ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১১:৪২ এএম

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। উদিত হয় বাংলাদেশে নতুন সূর্য। শুরু হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। পরাজিত শক্তি যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আলহাজ্ব জি কে গউছ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শক্তভাবে রাজপথে অবস্থান নেন।

বিএনপির রাজনীতিতে আলহাজ্ব জি কে গউছের ৪০ বছর। ১৯৮৪ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। সভাপতি নির্বাচিত হন বৃন্দাবন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের। তিনি ১৯৮৭ সালে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, ১৯৯৪ সালে হবিগঞ্জ পৌর যুবদলের সভাপতি, ১৯৯৫ সালে হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৬ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ১৯৯৮ হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি, ২০০৪ সালে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, ২০১১ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ২০১৬ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং ২০২৪ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

এ দীর্ঘ পথচলা মোটেও তার জন্য মসৃণ ছিল না। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি ও ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়েছে। ৪২টি রাজনৈতিক মামলায় আসামি হয়ে ১৫১৭ দিন কারাভোগ করেছেন। কারাগারেও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। থামিয়ে দিতে দলের ভিতরে বাহিরে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবুও রাজপথে জি কে গউছকে থামানো যায়নি, থেমে থাকেননি। জনগণের জি কে গউছ জনগণের মধ্যেই তার সৌন্দর্য।

বানিয়াচং থানায় জনতার অবরোধে আটক ৫৭ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করতে যখন ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটে যান জি কে গউছ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৫৭ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

তিনি পাড়া-মহল্লায় ছুটে যান মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয় এবং কোনো অন্যায়, অপকর্ম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং বল প্রয়োগ যাতে কেউ না করতে পারে সে জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা জানিয়ে দেন। প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান দলীয় নেতাকর্মীদের।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হবিগেঞ্জর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে জি কে গউছকে স্ব স্ব দপ্তরে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে কোনো সরকারি দপ্তরে প্রবেশ করেননি।

জি কে গউছ টানা ৩ বার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেরর ছিলেন। শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের চেকে স্বাক্ষর করেছেন। ১/১১ এর সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও অসংখ্য মামলা হয়েছে। কিন্তু এক টাকা দুর্নীতি করেছেন, অনিয়ম করেছেন, এমন অভিযোগে জি কে গউছের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকার কোনো মামলা দিতে পারেনি। যে মামলা দেয়া হয়েছিল সেগুলোও ম্যিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় জি কে গউছ বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর হবিগঞ্জে যে কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার সাথে আলহাজ্ব জি কে গউছের কোনো সম্পর্ক নেই। মামলাগুলো নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলা বিএনপি বা জি কে গউছের দিকনির্দেশনায় দায়ের করা হয়নি। তাই টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাসহ অন্যান্যদের আসামি না করার প্রশ্নই আসে না।

আওয়ামী লীগ নেতা ড. শাহ নেওয়াজকে অর্থের বিনিময়ে মামলায় আসামি করা হয়নি যে আজগুবি অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বরং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হবিগঞ্জের ৩টি মামলায় আসামি হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ড. শাহ নেওয়াজ। তিনি শহরের মোস্তাক হত্যা মামলার ৫নং আসামি, বানিয়াচঙ্গে নাইন মার্ডার মামলার ১৫নং আসামি এবং শহরে আরও একটি মামলার ১নং আসামি।

শহরের বিশিষ্ট ওষুধ ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট প্রবাল কুমার মোদক (ঝন্টু মোদক) বলেন- আমাকে জড়িয়ে হবিগঞ্জের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক। আমরা ভিন্ন ধর্মের হলেও উনার আব্বা-আম্মার সাথে আমাদের পারিবারিক একটি বন্ধন রয়েছে। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে জি কে গউছের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নকীব ফজলে রকীব মাখন বলেন- আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আলহাজ্ব জি কে গউছ হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেট বিভাগের নেতা। আমরা বিএনপির আদর্শে রাজনীতি করি। আমরা জি কে গউছের মদদপুষ্ট কথাটি সঠিক নয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ তুলে অপপ্রচার করছে।

শহরের জালালাবাদ অংশে খোয়াই নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য টেন্ডার ছাড়াই জি কে গউছের ছোট ভাই জি কে গাফাফারকে নির্মাণ কাজ দেয়া হয়েছে বলে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হাস্যকর। কারণ এই বাঁধ মেরামতের জন্য এখনও কোনো টেন্ডারই হয়নি।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সদর) সামিউল আজম বলেন- গত বন্যায় খোয়াই নদীর জালালাবাদ অংশে ভাঙনে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধটি মেরামত করতে ডিজাইন ডাটা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ডিজাইন ডাটা অনুমোদন হয়ে আসলে আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবো।

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসিইউ বেড স্থাপন প্রজেক্টের টেন্ডার হয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে একই বছরের ৩০ নভেম্বর। প্রাক্কলন ব্যয় ১ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ৫৬৪ টাকা। কাজটি পেয়েছেন ঢাকা ওয়ারী এলাকার মেসার্স এস এ এন্টারপ্রাইজ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম আরিফুল ইসলাম। অথচ ওই মিথ্যা সংবাদে আইসিইউ বেড স্থাপন প্রজেক্টের প্রাক্কলন ব্যয় ২০ কেটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের রাজনীতিতে আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে। যারাই আমার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ ইজ্জতের মালিক। মিথ্যা ও আজগুবি অভিযোগ তুলে আমাকে মানুষের কাছ থেকে আলাদা করা যায়নি, যাবেও না। আমি দেশের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জ পৌরসভায় ৩ বার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৮ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। মেয়র থাকাকালীন শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের চেকে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু কোনো অনিয়ম দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। ১/১১ সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকার আমার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে ১৫১৭ দিন কারাভোগ করেছি। কিন্তু পৌরসভায় একটি টাকা আত্মসাৎ করেছি, দুর্নীতি করেছি এমন অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।’

তিনি বলেন- ‘জুলকার নাইন একজন আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিক। তার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের ভুল তথ্যের কারণে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যায়, মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ ধরনের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করছি।’

ইএইচ