কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঘর থেকে সিএনজির ব্যাটারি চুরি হয়ে যাওয়ায় মাইক ও সিএনজি ভাড়া করে চোরকে গালিগালাজ করেছেন মো. হৃদয় (২৮) নামের এক ব্যক্তি। ভুক্তভোগী চালক ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আনার মিয়ার ছেলে।
আজ ২৩ ডিসেম্বর সোমবার সকালে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পুরানগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সে ভিডিওতে দেখা যায় একটি সিএনজিতে মাইক লাগিয়ে চোরকে মনে দুঃখে গালিগালাজ করছে এক ব্যক্তি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গালিগালাজ করা ব্যক্তির নাম হৃদয়। হৃদয় ভৈরব গজারিয়া ইউনিয়নের মানকদী পুরানগাঁও গ্রামের মৃত আনার মিয়ার ছেলে। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক। গত শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে সিএনজি চালিয়ে বাড়িতে এসে, সিএনজির ব্যাটারি খুলে মায়ের ঘরে রাখেন। রাখার কিছু সময় পরই ব্যাটারিটি ঘর থেকে চুরি হয়ে যায়।
হৃদয়ের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের চাল নেই, জানলা নেই, বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। পলিথিন দিয়ে কোনো রকম জানালা ও ঘরের চালা আটকিয়ে সেখানেই বৌ বাচ্চা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
মানিকদি চৌমুরি বাজারের মাইকের দোকানদার মো. আবেদ উল্লাহ বলেন, সকালে একটি লোক পাগলের মতো এসে মাইক ভাড়া চায়। প্রথমে আমি দিতে চাইনি, পরে অনেকের অনুরোধে ভাড়া দেই। তারপর দেখি মাইক দিয়ে সে চোরকে গালিগালাজ করছে।
এ বিষয়ে হৃদয় বলেন, আমি গরিব মানুষ অন্যের সিএনজি ভাড়ায় চালিয়ে দিন এনে দিন খাই।ব্যাটারি চুরি হওয়ায় আজ দুইদিন ধরে তিন সন্তান, বৌ, মা, নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এর মধ্যে প্রতিদিন পাঁচশো টাকা হাজিরা দিতে হয় মহাজনকে। এমতাবস্থায় ব্যাটারি চুরি হওয়ার পরদিন এলাকার মাদকসেবীসহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি হাতে পায়ে ধরেছি, যাতে আমার ব্যাটারিটি ফিরিয়ে দেয় কিন্তু কেউ আমার ব্যাটারি ফিরিয়ে দেয়নি। পরে রাগে ক্ষোভে মাইক ভাড়া করে চোরকে মনে দুঃখে গালিগালাজ করেছি। এর জন্য কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমা প্রার্থী।
হৃদয়ের মা অরুনা বেগম বলেন, হৃদয়ের বাপ মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগেও একবার ব্যাটারি চুরি হয়, অনেক কষ্টে ধারদেনা করে ব্যাটারি কিনতে হয়েছে। এরই মধ্যে গত শনিবার আবার ব্যাটারি চুরি হলে, আমার ছেলে অনেকটা পাগলই হয়ে যায়। দুইদিন ধরে ব্যাটারির জন্য গাড়ি চালানো বন্ধ। এমতাবস্থায়, অভাবের সংসার এখন কীভাবে চলবে, কীভাবে মহাজনের হাজিরা দিবে, এই চিন্তায় ছেলে আমার অনেকটা পাগলপ্রায় হয়ে গেছে ।
সিএনজির মালিক মাসুদ মিয়া বলেন, হৃদয় আমার গাড়ি চালায়, দৈনিক সাড়ে চারশো টাকা ভাড়া দেয়। চুরির ঘটনাটি শুনেছি কিন্তু আমার পক্ষেতো তেমন কিছু করার নেই। আমি বড়জোর তার কয়েকদিনের ভাড়া মকুফ করতে পারি।
৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. মানিক চাঁন বলেন, যে কারো কোন কিছু চুরি হলে বিষয়টি দুঃখজনক। তবে মাইকে গালাগালের বিষয়টি সামাজিক ভাবে অন্যায়। গরিব মানুষ দুঃখে এই কাজটা করেছে।
এ বিষয় ভৈরব থানার (ওসি) মোহাম্মদ শাহিন বলেন এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএস