দাম কম, মৌসুমের শুরুতে হতাশ লবণ চাষিরা

মো. আবদুল হালিম, কক্সবাজার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৮:৪৮ পিএম

লবণের মূল্য গত মৌসুমের চাইতে প্রতিমণে প্রায় ১০০ টাকা কমে যাওয়ায় শুরুতেই হতাশ হয়ে পড়েছেন লবণ চাষিরা।

গত মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ প্রায় ৩৯০-৪১০ টাকা দরে বিক্রি হলেও চলতি মৌসুমের শুরুতেই প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩০০ টাকা দরে। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

বিসিক সূত্রে জানা যায়, গত বছর লবণের মোট উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৮ হাজার টন। গত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি মৌসুমে ২৬ লাখ টন অপরো শোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দেশে আগামী অর্থবছরে লবণের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। বিশেষ করে অনেক চাষির হাতে অবিক্রিত লবণ মজুদ আছে।

চাষি সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে লবণের চড়া মূল্য থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ চাষের জমির ইজারা মূল্য অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও কমে গেছে লবণের মূল্য। এতে লোকসানের মুখে পড়বেন চাষিরা। আগামীতে লবণের মূল্য বৃদ্ধি পাবে এমন আশাবাদ নিয়েই চাষিরা চাষে নেমে পড়েছেন।

বড় মহেশখালীর লবণ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি এক পাইকারের কাছে লবণ বিক্রি করেছিলেন। আগামীতে দাম আরও বাড়বে এই আশায় গত মৌসুমে এক হাজার মন লবণ তার হাতে মজুদ আছে।

তিনি বলেন, ‘তিন মাস আগে যে দাম পেয়েছিলাম এখন তা পাচ্ছি না। তখন মোকামে মনপ্রতি লবণের দাম ছিল ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা। এখন প্রতি মন লবণ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’

মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের পাইকারি লবণ বিক্রেতা নুরুল ইসলাম জানান, ‘চাষিদের কাছ থেকে প্রতি মন লবণ ২৯০-৩০০ টাকায় কিনেছি। এরপর তিনি লবণ কারখানায় তা বিক্রি করেছি মনপ্রতি ৩৪০ টাকায়। পরিবহণ ও শ্রমিকদের খরচ বিবেচনায় নিলে প্রতি মনে তার লোকসান হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।’

তিনি জানান, আগের মৌসুমের লবণ মজুদ থাকায় কারখানাগুলো বেশি দামে লবণ কিনতে রাজি নন।

কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং এলাকায় এ বছর অনেক চাষি আগাম লবণ চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু তারা কেউই আশানুরূপ দামে লবণ বিক্রি করতে পারেননি।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে লবণ পরিমণে ওজনে বেশি লবণ নেওয়ায় চাষিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন দাবিও রয়েছে তাদের। সনাতন পদ্ধতির পরিমাপে ৪০ কেজিতে মণ হলেও লবণ পরিমাপের ক্ষেত্রে প্রতিমণে নেওয়া হয় ৫০ কেজি। এতে ১০০ মণ লবণ পরিমাপে ফাঁড়িয়ারা নিয়ে যায় ১১০ মণ। এতে পরিমাপ সঠিক হলে চাষীরা লাভবান হত।

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে লবণ চাষ। চাষিরা বড় ধরনের লোকসানে পড়লে আগামীতে লবণ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপপরিচালক জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, লবণের কোন ঘাটতি আপাতত নেই। আশাকরি গত মৌসুমের ন্যায় চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

ইএইচ