‘দেহ ব্যবসা’য় রাজি না হওয়ায় পোশাকশ্রমিক স্ত্রীকে হত্যা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ১১:৪৩ পিএম

গাজীপুরের শ্রীপুরে দেহ ব্যবসায় রাজি না হওয়ায় পোশাক শ্রমিক স্ত্রী সুমাইয়াকে (১৯) হত্যা করে লাশ দোতলা ভবনের ভিতরে ছোট্ট ঘরে পুঁতে রাখার তিন মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের সদস্যরা।

এ ঘটনায় পুলিশ জয়নাল আবেদীন (৩৮) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর জুন্নুরাইন বিন আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শ্রীপুর পৌরসভার ২নং সিএন্ডবি এলাকার রফিকুল ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজ গেইট সংলগ্ন লতিফের বাসার ঘর খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও র‌্যাব।

ভুক্তভোগী সুমাইয়া কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার আমিরগঞ্জ বাজার এলাকার সেলিম মিয়ার মেয়ে। সে বাবা-মার সাথে শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তা (মসজিদ কলনী) গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকে এবং স্থানীয় বকুলতলা এলাকার আউটস্পেস স্পিনিং মিল লিমিটেড কারখানায় চাকরি করতো।

গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদীন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে এবং শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খণ্ড (নতুন বাজার) এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী। সে ওই এলাকার হাসেম প্রধানের বাসায় ভাড়া থেকে স্থানীয় সি আর সি টেক্সটাইল কারখানার ২নং গেটে ফার্মেসির দোকান রয়েছে।

আসামি হানিফ গাজীপুরের ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে। সে শ্রীপুর পৌরসভার ২নং সিএন্ডবি (পশ্চিম পাড়া) এলাকার লতিফের বাসায় ভাড়া থাকতো। লতিফ প্রায় চার বছর আগে একই জেলার পাশের কাপাসিয়া উপজেলা থেকে ২নং সিএন্ডবি এলাকায় জমি কিনে বাসা দোতলা নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী বেলাল মিয়া জানান, হানিফ বাড়ির মালিক লতিফের সাথে মিলে বিভিন্ন মেয়েকে ফুঁসলিয়ে বাসায় নিয়ে আসতো। পরে ওইসব মেয়েকে দিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসায় রাজি করাতো।

ভুক্তভোগীর মা তাছলিমা আক্তার জানান, সুমাইয়া শ্রীপুর-মাওনা সড়কের বকুলতলা এলাকার আউটস্পেস স্পিনিং মিল লিমিটেড কারখানায় চাকরি করতো। ওই কারখানায় চাকরি করার সময় প্রায় দুই বছর পূর্বে হানিফের সাথে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে হানিফ তার স্ত্রী, সন্তানের কথা গোপন রেখে আমার মেয়েকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিবাহ করে। বিয়ের পর আমার মেয়ে তার স্বামীর নারী ব্যবসার কথা জানিতে পেরে হানিফকে জিজ্ঞাসা করলে সে আমার মেয়েকে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। সুমাইয়া আমার ভাড়া বাসায় এসে জানায় হানিফের সাথে সংসার করবে না। পরে হানিফ মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। আসামির হুমকি ও ভয়ে মেয়েকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ভবানীপুর এলাকার আবু বকর ছিদ্দিকের বাড়ির ভাড়াটিয়া মেয়ের দাদীর কাছে রেখে আসি। হানিফ মেয়ের খোঁজ জানতে পেরে তার সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ো ফুঁসলিয়ে প্রায় ৩ মাস পূর্বে মেয়ের দাদীর কাছ থেকে নিয়া যায়। পরে হানিফের কাছে সুমাইয়ার কথা জানতে চাইলে সে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে সময় পার করতে থাকে।

এক পর্যায়ে বুধবার বেলা ১১টায় হানিফকে মাওনা চৌরাস্তায় পেয়ে সুমাইয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে কোথায় আছে জানে না বলে জানায়। পরে মেয়ের সন্ধান না পেয়ে হানিফের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করি।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জামান জানান, সুমাইয়ার মা তাছলিমা আক্তার হানিফসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ফার্মেসি ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার রাতে আসামি হানিফ ও বাড়ির মালিক লতিফকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। আসামিরা র‌্যাব হেফাজতে রয়েছে।

ইএইচ