বরগুনার পাথরঘাটায় যুবদল নেতা নাসির হাওলাদারকে (৩৮) পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনায় সরাসরি শিবিরের কর্মীরা অংশ নিয়েছেন এবং এর পেছনে জামাতের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বরগুনা জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদ হোসেন মোল্লা।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেছে, দলীয় নেতাদের উপর হামলা করেছে। তাদেরকে জামায়াতের ছত্রছায়ায় সদস্য বানিয়েছে। এমনকি জামায়াতের কার্ড গলায় ঝুলিয়েও তারা তাদের দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে। মূলত পাথরঘাটার বিএনপির শক্তিশালী অবস্থানকে দুর্বল করার জন্যই তারা আ.লীগকে সঙ্গে নিচ্ছে জামায়াত।
বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় নিহত নাসিরের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পাথরঘাটা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আনা হলে জাতীয় পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান হয়।
এ সময় জেলা যুবদলের সভাপতিসহ পাথরঘাটা উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শিবিরকে দায়ী করে বক্তব্য প্রদান করেন।
এর আগে বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কালমেঘা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তার মেলেটারির বাড়ির সামনে নাসিরকে কুপিয়ে পায়ের রক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসিরকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় ঘটনাস্থলে হাসান, রাব্বি ও ইব্রাহীমকে রামদাসহ দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
নিহত নাসির হাওলাদার পাথরঘাটা পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে এবং ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য।
এদিকে ঘটনাস্থলে রামদা হাতে থাকা রাব্বি ও হাসানকে পাথরঘাটা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জামায়াতের একটি কর্মী সভায় অংশ নিয়ে জামায়াতের আইডি কার্ড গলায় ঝুলানো অবস্থার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ছবিকে কেন্দ্র করে শিবিরের কর্মী বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়াও এঘটনার আগে বুধবার সকালে হাসান ও রাব্বিকে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিট জামায়াতের সভাপতি ঈসা রুহুল্লাহ বিরুদ্ধে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকালে পাথরঘাটা থানায় হত্যা মামলা করেছে নিহত নাসিরের বোন রুমী আক্তার। এতে হাসান, রাব্বি, ইব্রাহিম, রাব্বির পিতা মাহবুব, ঈসা রুহুল্লাহ, আবু সাঈদ, কাইউম ও আব্দুস সালাম মুন্সিকে আসামি করা হয়েছে। এরা সকলেই পাথরঘাটা পৌরসভার বাসিন্দা।
এরমধ্যে কাইউম পৌর শিবিরের সভাপতি, ঈসা রুহুল্লাহ পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের ইউনিট সভাপতি, আবু সাঈদ শিবিরের ও আব্দুস সালাম মুন্সী জামায়াতের কর্মী বলে জানা গেছে।
পাথরঘাটা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ চাপরাশি বলেন, আমি জামায়াত নেতাদের অনেক আগেই বলছি জামায়াতের মধ্যে আ`লীগের সন্ত্রাসীরা ঢুকে যাচ্ছে। আপনারা তাদেরকে সদস্য করা থেকে বিরত থাকুন। কিন্তু তারা একথা না শুনে বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে আ`লীগ নিয়ে মেতে উঠেছে। আজকের জামায়াত শিবিরের জন্য আমাদের সহযোদ্ধাকে হারাতে হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক জানান, আমরা দেখেছি জামায়াতের আইডি কার্ড ঝুলানো ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের সহযোগী সদস্য সম্মেলন অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন পাথরঘাটায় জামায়াতের লোক কম থাকায় আ.লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের জামায়াতের সদস্য বানিয়ে তাদের দল ভারী করছে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা শামীম আহমেদ বলেন, অভিযুক্ত রাব্বি ও হাসানের সাথে শিবিরের কোন সম্পর্ক নেই। অন্য কোন ভাবে জামায়াতের আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তারা আমাদের সহযোগী কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন। এ ছবিকে পুঁজি করে রাব্বি ও হাসানের শিবির বলছে বিএনপির লোকজন। এছাড়াও রাব্বিকে ছাত্রদলের মিছিলেও দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পাথরঘাটা উপজেলা সভাপতি আহমেদ সুজন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে হাসান ও রাব্বি কোন সময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিল না।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানায়, নাসির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাহবুব নামে এক আসামিকে আটক করা হয়েছে। শহরে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। আসামির যে সংগঠনের সদস্য হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইএইচ