লংগদুতে জলপাই চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

মহুয়া জান্নাত মনি, রাঙামাটি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

টক জাতীয় ছোট ফল জলপাই দেখলেই জিভে জল আসে! এতে ভিটামিন, মিনারেলসহ ভেষজ উপাদান, খাদ্যআঁশ, আয়রন, কপার, ভিটামিন-ই, ফেনোলিক উপাদান, অলিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে।

এই ফল শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই সাহায্য করে না, একইসঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এতো সব উপকারী একটি ফল রাঙামাটিতে বাণিজ্যিক চাষাবাদে ছিল অবহেলিত। তবে চাষিরা ধীরে ধীরে শুরু করছেন চাষ। ফলে বাড়ছে সম্ভাবনা।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে জলপাই অতি পরিচিত মুখরোচক ফল। কাঁচা ও পাঁকা যে কোন অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। তবে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি ও তেল তৈরিতে বেশি ব্যবহার হয়। চলতি মৌসুমে রাঙামাটিতে জলপাইয়ের বাম্পার ফলনে রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। দাম ভালো পাওয়ায় জলপাই চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

জলপাই চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হওয়ার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জেলার জমি ও আবহাওয়া বেশ ভালো জলপাই চাষের জন্য। রাঙামাটি জেলায় প্রত্যেকটি বাড়িতে একটি-দুইটি করে জলপাই গাছ দেখা যায়। এর বিস্তার ঘটানো গেলে বাণিজ্য প্রসার করা সম্ভব।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে জলপাই সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জলপাই সংগ্রহ করে একজায়গায় একত্রিত করে বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করছেন। রাঙামাটির লংগদু উপজেলাতে মৌসুমি ফল জলপাইয়ের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। 

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম বলেন, আমি শখ করে বাড়ির পাশের জমির পাহাড়ি ঢালুতে ২০টি জলপাই গাছ লাগিয়েছি। এই গাছ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল দেয়। জলপাই গাছে এতো ফল আসে, যা পাতা থেকে ফল বেশি। এই ফলের অনেক চাহিদা। ফলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। বাড়িতে পাইকার এসে নিয়ে যান। এ বছর দুই লক্ষ টাকার জলপাই বিক্রি হয়েছে।

একই ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, আমি আমার বাড়িতে একটি জলপাই গাছ লাগিয়েছি। এছাড়াও পাহাড়ের ২ একর ঢালু জমিতে ৫০টির মত জলপাই গাছের বাগান করেছি। শীতের শুরুতে এর ফল দেওয়া শুরু হয়। ফল পাতার থেকে বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। উৎপাদনে খরচ কম, লাভ বেশি। ফলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ মন্দ নয়।

আরেক বাগান মালিক সরোয়ার হোসেন জানান, তিনি তিন একর জমিতে ১০৫টি জলপাই গাছ লাগিয়েছেন ২ বছর আগে। প্রথম বছরেই বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম ফলনেই তিনি ৩ লাখ টাকায় জলপাই বাগান বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন, গাছের বয়স বাড়ার সাথে প্রতিবছর ফলনের পরিমান আরও বাড়বে এবং অর্থের পরিমাণও বাড়বে। তিনি সকল চাষিকে জলপাই চাষে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

রাঙামাটিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে জলপাই গাছ রয়েছে। এবার ৫০০ মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হয়েছে। জলপাই দিয়ে আচার, চাটনি, জ্যাম-জেলি প্রভৃতি তৈরি করা হয়। গাছে তেমন কোনো পোকামাকড় ও রোগ বালাই আক্রমণ করে না। বাংলাদেশের মাটিতে যেকোনো স্থানে সহজে জন্মাতে পারে। তাই এ পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলটি চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ফল বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।

ইএইচ