মাসিক সভার রেজুলেশন খাতা বাড়িতে নিতে বাধা দেওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা। তদন্ত করে সত্যতা পেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক।
ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সোহরাব হোসেন খান দীর্ঘ দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত ছিলেন। তার অনুপস্থিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরদার। শনিবার দুপুরে জরুরি একটি বিষয় নিয়ে পরিষদে ইউপি সদস্যদের নিয়ে একটি সভা চলছিল। এসময় হঠাৎ ইউনিয়ন পরিষদে কিছু লোক নিয়ে আসেন চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন। এসেই ইউপি সচিব আব্দুস সোবাহান সরদারের উপর চড়াও হন চেয়ারম্যান।
‘তাকে’ ছাড়া কেন সভা করা হচ্ছে, এ বিষয় জানতে চান। চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার করণে পরিষদের কাজ চলমান রাখার জন্য প্যানেল চেয়ারম্যান সভা করছেন বলে জানান সচিব। এতে ক্ষেপে গিয়ে সচিবের সাথে কথা কাটাকাটি করতে থাকেন। এর এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক রেজুলেশন খাতা বাড়িতে নিয়ে যেতে চান চেয়ারম্যান। সচিব তাকে বাঁধা দিলে চেয়ারম্যানসহ সাথে থাকা খোকন হাওলাদার সচিবকে মারধর করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে উপস্থিত লোকজন চেয়ারম্যানের হাত থেকে সচিবকে রক্ষা করে।
বিষয়টি জানাজানি হলে রবিবার দুপুরে কার্যালয়ে এসে প্রতিবাদ জানায় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যরা। এসময় কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, হাসিনা সরকার পতনের পর দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান গা ঢাকা দিয়েছিলেন। মাসিক সভার খাতায় স্বাক্ষর করতে বাঁধা দেয়া ও মাসিক সভার খাতা বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাঁধা দিলে ইউপি চেয়ারম্যান তার সচিবের উপর হামলা করে। এছাড়াও তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগও করেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব খানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার বিকেল ৪ টার দিকে কয়েকজন লোক নিয়ে পরিষদে আসেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান ও তার সাথে থাকা খোকন হাওলাদার নামে একজন সচিবকে মারধর করে। সচিবকে এভাবে লাঞ্ছিত করার উচিৎ হয়নি। এর বিচার হওয়া দরকার।’
ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সচিবের গায়ে হাত দেয়ার বিষয়টি দু:দুঃখজনক। তাদের বিচার হওয়া দরকার। বিগত ৩ বছর ইউনিয়নের সব ধরনের কাজ নিজের ইচ্ছেমতো করেছেন চেয়ারম্যান। তখন তার দল ক্ষমতায় ছিল করছে। এখনও কেন তার সেই আচরণের কোন পরিবর্তন হয়না।’
ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘ইউপি সচিবকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা খুব কমই ঘটেছে মাদারীপুরে। বিগত দিনে চেয়ারম্যান কাউকে তোয়াক্কা করেননি। নিজের ইচ্ছে মত সব করেছে, এখনও করার চেষ্টা করছে। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে এটাই দাবি।’
অভিযোগের বিষয় ইউপি সচিব আব্দুস সোবাহান সরদার বলেন, ‘ চেয়ারম্যানের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা। পরে চেয়ারম্যান ও খোকন হাওলাদার ক্ষমা চেয়েছে। যেহেতু ঘটনাটি ঘটে গেছে এবং ক্ষমা চেয়েছেন তারা। আল্লাহর দিকে চেয়ে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহবার হোসেন খান বলেন, ‘অভিযোগগুলো মিথ্যা। কয়েকজন ইউপি সদস্য ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এসব করাচ্ছে। ইউপি সচিবের গায়ে হাত দেয়ার কারণে ক্ষমা চেয়েছি।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরএস