উৎসব মুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে যশোরের চৌগাছার তিনদিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গুড় মেলা। মেলার শেষ দিনেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। শেষ সময়ে একটু কম দামে গুড় কিনতে এসেছেন অনেকেই। তবে মেলার জমজমাট সমাপনী অনুষ্ঠানে নজর ছিল বেশিরভাগ দর্শনার্থীর। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তৃতীয় বারের মাতো গুড় মেলা শুক্রবার শেষ হয়।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি। তিনি বলেন, মেলা শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে আনন্দের অনুভ‚তি সৃষ্টি হয়। মেলার আক্ষরিক অর্থ মিলন। মেলার সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগাযোগ নিবিড়। বাংলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্মের মানুষের সমন্বয়। মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসে প্রাণচাঞ্চল্য। মেলার বিভিন্ন বিনোদনমূলক আয়োজন মুগ্ধ করে আগত দর্শনার্থীদের।
তিনি বলেন, খেজুর গুড় যশোরবাসীর নিজস্ব শিল্প। যশোর জেলা খেজুর গুড় ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। আর চৌগাছার মানুষ সেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মেলার আয়োজন করেছেন। আমি এই উপজেলারই একজন। এজন্য আমি এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। মেলায় আগত গাছিরা তাদের উৎপাদিত খাঁটি গুড় ন্যায্য মুল্যে বিক্রি করার জায়গা পেয়েছে। আবার ক্রেতারাও খাঁটি গুড় কিনতে পারছেন। গুড় ক্রেতা ও বিক্রেতার এই ঠিকানা গুড় মেলা আরো আকর্ষণীয় করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, সারা দেশে যশোরের খেজুর গুড়ের চাহিদা রয়েছে। তবে নির্ভেজাল খেজুর গুড়ের গ্যারান্টি দিতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন গাছি তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।
সমাপনী ও পুস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের সভাপতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, যশোর থেকে কৃষি পণ্যবাহি বিশেষ র্ট্রেনে দেশের রাজধানীতে যশোরের খেজুর গুড় পৌছানোর ব্যবস্থা করা হবে। যাতে এই জেলার মানুষ খুব সহজেই তাদের উৎপাদিত গুড়সহ কৃষিজাত দ্রব্য ঢাকায় পৌছাতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের উপ- মহাপুলিশ পরিদর্শক রেজাউল হক পিপিএম, যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা।
এ সময় অর্থনীতিবীদ ও সাংবাদিক প্রফেসর ড. এম শওকত আলী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম ইদ্রিস সিদ্দিকী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ স¤পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা গোলাম মোরশেদ, সাধারণ স¤পাদকমাওলানা নুরুজ্জামান, সহ-সাধারণ স¤পাদক মাষ্টার কামাল আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, সাবেক সাধারন স¤পাদক ইউনুচ আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র সেলিম রেজা আওলিয়ার, সাধারন স¤পাদক আব্দুল হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তিনদিনব্যাপী মেলায় শ্রেষ্ঠ ৩ জন গাছিকে পুরস্কার দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার শ্রেষ্ঠ গাছির প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন স্বরুপদাহ ইউনিয়নের সাঞ্চডাঙ্গা গ্রামের গাছি আব্দুর রাজ্জাক। উপজেলা প্রশাসনের তাকে ১০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেছেন। দ্বিতীয় হয়েছেন পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের আবুল গাজী। তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার টাকার চেক। ৩য় পুরস্কার হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছেন সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের গাছি মিজানুর রহমান। এছাড়া ১১ টি ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ১১ জন গাছিকেও পুরস্কার দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন থেকে মেলায় অংশগ্রহনকারি সকল গাছিদের বিশেষ পুরস্কার দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে ১৫ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। তিনদিনব্যাপী মেলার দর্শানার্থীদের আকর্ষণের জন্য নাটক, আঞ্চলিক খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মেলায় শীতের পিঠা-পুলি নিয়ে অংশ নেওয়া চৌগাছা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এলিজা খাতুন জানান, এবারের মেলায় বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন তারা। প্রায় সারা দিনই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ছিলেন।
প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। কেউ কেউ জানিয়েছেন ক্রেতা কম ছিল তাদের স্টলগুলোতে।
আরএস