শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের চার তলা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর থেকে এই ভবনটিতেই চলে জেলার বিচারিক কার্যক্রম।
একটি ভবনে জায়গা না হওয়ায় পাশাপাশি আরও ৩টি টিনশেড ভবন ও ডিসি ভবনের একটি কক্ষসহ আরও ৫টি টিনশেড ঘরে চলে নারী শিশুসহ গুরুত্বপূর্ণ বিচারের কাজ। এতে করে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে বিচারিক কার্যক্রম অন্যদিকে দীর্ঘ হচ্ছে মামলার জট।
গত ১০ বছরের অধিক সময় ধরে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও হয়নি ভবন নির্মাণ। ফলে ৬টি ভিন্ন ভিন্ন অফিসে চলছে বিচারিক কাজ। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছে বিচার প্রার্থী সাধারণ মানুষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একই কক্ষের মধ্যে একদিকে চলছে বিচারিক কাজ, অন্যদিকে চলছে শায়েস্তা, কম্পিউটার অপারেটর, রেজিস্ট্রারসহ সকল কার্যক্রম। দেখা গেছে, একজন বিচারকের কাজ শেষ হলে একই স্থানে শুরু হচ্ছে অন্য বিচারকের কাজ। শরীয়তপুরে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৮০ থেকে ১০০টি মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি হচ্ছে এই আদালতে। এজলাস সংকট আর নথি সংরক্ষণ জটিলতায় তৈরি হচ্ছে মামলার দীর্ঘ জট। তাছাড়া ওই ভবনটিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। চরমভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন আইনজীবী, কর্মকর্তা কর্মচারী আর বিচার প্রার্থী সাধারণ মানুষ। নথিপত্র রাখার আল মীরা দিয়ে দেয়াল তৈরি করে আলাদা করা হয়েছে বিচারের এজলাস। বিচার প্রার্থী, আইনজীবী, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হট্টগোলের মধ্যেই চলে বিচারিক কাজ। ১৬০ জন অফিস সহকারী অফিস সংকলনের কারণে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে তাদের। এজলাস শেয়ার করার কারণে বিচারিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি নথি খুঁজে পেতেও কষ্ট হয়।
শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের নাজির মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নারী ও শিশু আদালত বসছে ভাঙাচোরা টিনশেড ভবনে, এমনভাবে ৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টিনশেড ভবনের এজলাস শেয়ারিং করে কাজ করছেন। এতে নথিপত্র খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি বিচারের কাজে মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। এতে চরমভাবে হয়রানি হচ্ছে বিচার প্রার্থী আইনজীবীসহ বিচারকরা।’তিনি আরও বলেন, ‘গাদাগাদি করে যেই ভবনটিতে আমরা কাজ করছি সে ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটলসহ খসে পড়ছে পলেস্তারা। আমরা চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। নতুন একটি ভবনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণ হলেও ভবন এখনও কেন হচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই। তবে সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের কাজ সঠিক ও সুন্দরভাবে করার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণের অনুরোধ করছি।’
শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ছোট্ট একটি ভবনের মধ্যেই চলছে বিচারিক কার্যক্রম। একজন বিচারকের কাজ শেষ করে একই জায়গায় বসছেন অন্য বিচারক, এভাবে কক্ষের স্বল্পতা ও জায়গা ছোট হওয়ার কারণে আমরা আইনজীবীসহ বিচার প্রার্থীরা স্বস্তি বোধ করছেন না। অন্যদিকে ভবনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার সংস্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। বিচারকরা যদি ভালো পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা করতে না পারে তাহলে সে সেখানে বিচারটা ভালোভাবে করতে না পারার পাশাপাশি বিচারকার্যে মনোনিবেশনেও করতে পারছেন না। শরীয়তপুরের বিচার প্রার্থী আইনজীবীসহ সকলেই আমরা এই ভোগান্তিতে রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদস্থদের বিষয়টি অবগত করলেও এখনও কোনো ভূমিকা নেয়া হয়নি। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনটি কাজ শুরু করার জন্য আমরা বারবার তাগিদ দিলেও শুরু হয়নি কাজ। জেলায় ভালোভাবে বিচারকার্য পরিচালনার স্বার্থে চিফ জুডিশিয়াল ভবনটি হওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
এবিষয়ে শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, জমি অধিগ্রহণ, ডিজিটাল সার্ভে, সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় নতুন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। ভবনটি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার চেষ্টা করছি।
ইএইচ