রাঙ্গুনিয়ায় সেচের পানির উচ্চমূল্য আদায়ে কৃষকের ক্ষোভ

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ১২:০২ পিএম

চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সেচপাম্প মালিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। স্কিম পরিচালক কানি প্রতি সেচ দিতে ২০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৬০০ টাকা করে দাবি করায় ক্ষুব্ধ বোরো চাষিরা। অতিরিক্ত সেচের পানির দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। পানি না পেলে বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা করছেন তারা। উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান।

এর আগে গত সোমবার উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে পূর্ব সরফভাটা এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। সকালে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে উপজেলা সদরের ইছাখালী এলাকায় অর্ধ শতাধিক কৃষক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

লিখিত অভিযোগে তারা জানান, তারা উপজেলার পূর্ব সরফভাটা গ্রামের কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সারে বিল, জনের বিল, খরাতের বিল, ফিরিঙ্গাখীলসহ আশেপাশের ১২০০ কানি কৃষি জমির প্রায় ৫০০ জন কৃষক স্কিমের (সেচ প্রকল্প) মাধ্যমে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু স্কিমের পরিচালক পানি সেচের টাকা দিন দিন বাড়িয়ে চলেছেন। আশেপাশে স্কিমগুলোতে কানি প্রতি সেচ দিতে ১২০০ টাকা হারে নির্ধারণ করা থাকলেও এই চাষাবাদের জমিগুলোতে প্রতিবছর ২০০ টাকা করে বৃদ্ধি করতে করতে বর্তমানে ২০০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। যা কৃষকদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এই নিয়ে স্কিম পরিচালকের সাথে বৈঠক করার পর কম রাখার আশ্বাসে কৃষকরা বীজতলা তৈরি করে। যা বর্তমানে পরিপুষ্ট হয়ে রোপণের উপযুক্ত হয়েছে। কিন্তু স্কিম পরিচালক বাড়তি টাকা দাবি করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে কম দামে সেচ দিয়ে অস্বীকৃত জানান। এতে বীজতলা নষ্টসহ চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানান কৃষকরা।

কৃষকদের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন কৃষক মো. ফারুকুল ইসলাম, আবু এনাম উদ্দিন, মো. নাছির উদ্দীন, মো. নূর করিম, আবদূর সফুর, বাচা মিয়া, মো. এনাম, জালাল আহমদ, মো. ইউসুফ, মো. তাহের, রেজাউল করিম, নূর করিম, মো. ফারুক, আবুল কালাম, মো. ইসমাইল, মো. জসিম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডের সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশি প্রবাসী দুই সহোদর ভাই নাদিম চৌধুরী জাকের ও কামাল চৌধুরীর শিলক খালের পানি দিয়ে সেচ প্রকল্প নির্মাণ করেছেন।

অতিরিক্ত সেচ খরচ আদায়ের বিষয়ে স্কিমের পরিচালক নাদিম চৌধুরীর সাথে বললে তিনি জানান, কৃষক পরিবারে জন্ম আমার, আমি বুঝি কৃষকের কষ্ট। আমার একক প্রচেষ্টায় ৫০-৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে অসহায় কৃষকের জন্য সেচ প্রকল্প নির্মাণ করেছি। এতে পার্শ্ববর্তী শিলক ইউনিয়নসহ অনেক আবাদি/অনাবাদি জমি চাষের উপযুক্ত হয়েছে। আমি বিগত বছরগুলোতে কানির প্রতি ১৮০০ টাকা করে নিতাম তবে এবার ২০০ টাকা বাড়িয়ে ২০০০ করা হয়েছে। এখানে বিদ্যুতের খরচ বেশি তাছাড়া এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। তাই বাড়ানো হয়েছে। আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, সরফভাটায় জামাল সও ২৬০০ এবং যথাক্রমে মওলানা রফিক ২২০০ টাকা হারে চার্জ করে ডিপ টিউবলের স্কীম দিয়ে।

তিনি আরো জানান, তারা গভীর নলকূপের স্কীম সেচ দিচ্ছে, যেটির পানি ব্যবহারে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিরসাহিত করা হচ্ছে। ডিপ টিউবলের কারণে জমিনে পানির লেয়ার নিচে নেমে যায় যার ফলে গভীর থেকে লবণাক্ত পানি উঠে আসে, একবার যদি জমি লবণাক্ত হয়ে যায়, ওই মাটিতে কোনদিনও ফসল হবে না। নদীর পানি কৃষকের জন্য আল্লাহর জন্য নিয়ামত এবং মাটির জন্য পারফেক্ট ওয়াটার হিসেবে গণ্য করা হয়। সে ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা আমি অনেক কমই নিচ্ছি। তারপরও আমরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সরকারের নির্ধারিত মূল্য সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি তাঁর। প্রশাসন সুষ্ঠু তদারকি করে আমাদের যা করতে বলা হবে আমরা করবো। তবে প্রশাসনও আমাদের দিকে সুদৃষ্টি রাখবে এটাই আশা করি

এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গুনিয়ায় সেচ স্কিমের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘এই বিষয়ে কৃষকরা অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। আমরা বিষয়টি তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, অতিরিক্ত সেচ খরচ আদায়ে নিয়ে একটা লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই সেচ কমিটির নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআরইউ