যশোরের চৌগাছায় বিউটি পার্লারের আড়ালে নারীদের প্রতারণার ফাঁদ। প্রতারক নারীদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনায় উপজেলার রোস্তমপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে মোস্তাক হোসেন বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় চৌগাছা থানা ও যশোর ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে এক নারীসহ ৬ জনকে আটক করেছেন। চৌগাছা থানা মামলা নং ১৭/১৭ তারিখ ২২-০১-২০২৫ ইং।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, নারী প্রতারক পৌর শহরের কালিতলা এলাকার জনৈক সাইফুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী রুপালী খাতুন (৩৫), মামলার বাদী মোস্তাক হোসেনের ছোট ভাই আব্দুর রহমানকে তার প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। প্রথমে আব্দুর রহমানকে পৌরশহরের কালিতলা এলাকার জনৈক সাইফুল ইসলামের বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে হত্যা ও গুমের ভয় দেখিয়ে উপজেলার আফরা গ্রামের জহিরুল ইলামের বাড়ীতে নেয়। সেখানে তাকে একটি বন্ধ ঘরে আটকিয়ে রাখে। সেখান থেকে দেহব্যবসায়ী নারী চক্রের সদস্যরা আব্দুর রহমানের মোবাইল থেকে তার বাড়ীতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। এমন অভিযোগ পেয়ে চৌগাছা থানা ও যশোর ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। সেখান থেকে প্রতারক চক্রে নারী সদস্য রুপালী খাতুনকে আটক করেন।
আটক অন্য আসামীরা হলো উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে নান্নু রহমান (৩৫) ও তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা (২৯), মনমতপুর গ্রামের তাইজুল ইসলামের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩০), একই গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে হৃদয় মহিবুল (২৮)ও ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়ীয়া গ্রামের আয়ূব হোসেনের ছেলে জাহিদ হাসান (৩৭) তিনি বর্তমানে চৌগাছা পৌর শহরের কালিতলা এলাকায় বাসা ভাড়ায় বসবাস করেন।
প্রতারণার ফাঁদ থেকে উদ্ধার হওয়া আব্দুর রহমান বলেন, তাকে প্রথমে পৌর শহরের কালি তলায় ডাকে রুপালী। আমি সেখানে গেলে এ চক্রের সদস্যরা আমাকে অস্ত্রে মুখে জিম্মি করে রুপালীর সাথে প্রথমে বিভিন্ন ভাবে নগ্ন ছবি ও ভিডিও করে। পরে সেখান থেকে বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমার কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। সন্ধ্যা নেমে এলে সে খান থেকে উপজেলার আফরা গ্রামের জহিরুল ইলামের বাড়ীতে নেয়। সেখানে আমাকে একটি বন্ধ ঘরে আটকিয়ে রাখে। সেখান থেকে দেহব্যবসায়ী নারী চক্রের সদস্যরা আমার মোবাইল থেকে আমার বাড়ীতে প্রথমে ৫ লাখ পরে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। খবর পেলে চৌগাছা থানা ও যশোর ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করেন ও প্রতারক চক্রে নারী সদস্য রুপালী খাতুনকে আটক করেন। এ সময় অন্য আসামীরা পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ বিভিন্ন এলাকা ও পৌর শহরে নারীরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। নারীরা খুব সহজেই একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। প্রতারণার মাত্রা এখন এতটাই প্রবল যে, এটা বড় ধরনের অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে। দেহ ব্যবসায়ী নারীদের ফাঁদ পড়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অনেকে এ নারীদের ফাঁদে ফেঁসে সমাজ পরিবার ও সম্মানের কথা চিন্তা করে লাখ লাখ টাকা তুলে দিচ্ছেন তাদের হাতে।
মালার তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি চৌগাছা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক রবিউল ইসলাম এ নারী চক্রের ফাঁদে পড়েন। তিনি তাদের চাহিদা মত ৫ লাখ টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এতে এ চক্রের সন্ত্রাসীরা ঐ শিক্ষকের অর্ধউলঙ্গ এক নারীর সাথে জোরপূর্বক ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। যে ভিডিওটি বর্তমানে টপঅফদ্যা চৌগাছা।
এ দেহ ব্যবসায়ী নারী চক্রের বেশির ভাগ সদস্যরা তাদের কাজের সুবিধার্থে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিউটি পার্লারের সাইনবোর্ড টানিয়ে তার আড়ালে প্রতারণা করে চলেছে।
চৌগাছার এক কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এ চক্রের এক সদস্য আমাকে টার্গেট করে দীর্ঘদিন আমাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। আমি বুঝতে পেরে নিজেকে সেভ করেছি। তিনি বলেন এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। দ্রæত সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। এই প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এর জন্য প্রয়োজন স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ।
এ দেহ ব্যবসায়ী নারী চক্রের হাতে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরাসহ কেউ নিরাপদ নেই। চারদিকে প্রতারণার এ ফাঁদ বিস্তার করে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ চক্রের রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। যার ফলে সমাজের নিরীহ মানুষের মধ্যে স্বস্তি-শান্তি নেই। মানুষ নানা ভাবে এ খারাপ নারীদের দ্বারা প্রতারিত ও জিম্মি হচ্ছে। চারদিকে প্রতারণার নতুন নতুন ফাঁদ পাতা রয়েছে। একটু অসচেতন অসাবধান হলে যে কেউ এ ফাঁদে পা দিতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এদের ধরার ব্যাপারে বেশ সক্রিয়।
এদের রয়েছে একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী চক্র। এরা প্রথমে সমাজের প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে। প্রথমে মিসকল দেয়। পরে কল ব্যাক করলে কথার জালে ফাঁসিয়ে তার নিকটতম হওয়ার চেষ্টা করে। এ ভাবে কিছু দিন চলার পর নামিদামি কোন ফাস্টফুডের স্টলে দেখা করার অফার দেয়। এ ভাবে চলে কিছু দিন। এর মধ্যে নারী প্রতারকদের দালালরা (সন্ত্রাসীরা) ঐ ব্যক্তির গতিবিধি লক্ষ্য করে। সুযোগ বুঝে দেহ ব্যবসায়ী নারী ও তাদের চক্রের সদস্যরা ফাঁদে পড়া ব্যক্তির অজান্তেই বিশেষ মুহূর্তগুলোর ভিডিও ধারণ করে। এর পর সেই ভিডিওকে পুঁজি করে শুরু হয় লাখ লাখ টাকা হাতানো। ফাঁদে পড়া ব্যক্তি সমাজে ও পরিবারের সম্মান রক্ষা করতেই এ প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দেন লাখ লাখ টাকা।
চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন বলেন, চৌগাছা থানায় একটি মামলা হয়েছে। চৌগাছা থানা পুলিশ ও যশোর ডিবির যৌথ অভিযানে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতারকদের পাকড়াও করতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
আরএস