৩৮ লাখ টাকা নিয়ে হজ্ব কাফেলা এজেন্সির পরিচালক উধাও

সুমন মোল্লা, পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম

বরগুনা ও পিরোজপুর জেলার ৫ উপজেলার ৩২ জন হাজীর কাছ থেকে প্রতারণা করে ৩৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বরগুনায় দারুস-সুন্নাহ হজ্ব কাফেলা এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব এম এ জাকারিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তারিকুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু মণ্ডলের আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সহকারী বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ মুবিন। এর আগে তারিকুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী পাথরঘাটার সাংবাদিকদের কাছেও অভিযোগ করেন।

আলহাজ্ব এম এ জাকারিয়া বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ওলামাগঞ্জ এলাকার মাওলানা রুহুল আমিন এর ছেলে। বরগুনা পৌর শহরের আল-মিজান শপিং কমপ্লেক্সে এন্ড মসজিদ মার্কেটের দারুস সুন্নাহ হজ্জ ও উমরাহ এজেন্সি অফিসের পরিচালক। জাকারিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টে বাগেরহাটের আলাদা আলাদা ঠিকানা দেয়া রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, বরগুনা থেকে দারুস-সুন্নাহ হজ্জ ও উমরাহ এজেন্সির পরিচালক মাওলানা জাকারিয়ার মাধ্যমে আগস্ট মাসে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কায় যান ৩২ জন ওমরাহ যাত্রী। সেখানে গিয়ে হাজীদের হাতখরচার প্রায় ২৮ লাখ টাকা ও বিমানের ফিরতি টিকিট না দিয়ে পালিয়ে যান জাকারিয়া।

তার আরোও জানান, ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ১৪ দিনের প্যাকেজ বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে যায় ৩২ জন হাজী। এর আগে সেখানে গিয়ে খরচের জন্য টাকা ভাঙ্গিয়ে সৌদি মুদ্রা রিয়্যাল দেয়ার কথা বলে নগদ টাকা নেয় জাকারিয়া।

ভুক্তভোগী পাথরঘাটার তারিকুল ইসলাম জানান, সৌদি আরব গিয়ে প্রয়োজনীয় খরচা ও স্ত্রীর জন্য গহনা কেনার জন্য ইসলামী ব্যাংক পাথরঘাটা এজেন্ট শাখা থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা বরগুনা ইসলামী ব্যাংকের জাকারিয়ায় অ্যাকাউন্টে পাঠাই।

কথা থাকে এ টাকার পরিবর্তে সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে সৌদি মুদ্রা রিয়্যাল দিবেন জাকারিয়া। কিন্তু মক্কায় গিয়ে রিয়্যাল না দিয়ে জাকারিয়া জানান মদিনায় মালামালের দাম কম সেখানে গিয়ে রিয়্যাল দিয়ে দেবো। পরে মদিনায় গিয়ে রিয়্যাল চাইলে বলেন ব্যাংকের ঝামেলার কারণে টাকা পাস হচ্ছে না। দেশে গিয়ে টাকা দিয়ে দেবো। এরপর বাংলাদেশে এসে কয়েক দফা তাগাদা দেই। পরে বরগুনার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে বিষয়টি জানালে তাদের কাছে গতবছরের ৯ ডিসেম্বর টাকা পরিশোধ করার কথা বলে। কথা মতো নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করে গত ৪ ডিসেম্বর পুনরায় টাকা দেয়ার কথা তিনি বলেন। ঐ নির্ধারিত তারিখে‌ও টাকা পরিশোধ না করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জাকারিয়া। এর আগে ওমরাহ থেকে দেশের আসার সময় বিমানের ফিরতি টিকিট নিশ্চিত না করে বিমানবন্দরে হাজিদের রেখে সটকে পড়েন জাকারিয়া। তখন ৩২ জন হাজী নিজ খরচে টিকিট কেটে দেশে ফিরেন।

একই অভিযোগ করেন বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান খোকা। তিনি জানান সৌদি মুদ্রা রিয়্যাল দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে নগদ ৮ লাখ টাকা নেয়। একইভাবে সৌদি আরবে অবস্থানকালে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দেশে ফিরে টাকা দেয়ার কথা বলেন।

এছাড়াও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার এছাহাক আলী, আবদুল খালেক, রহমত আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসলিমা বেগম, আলেয়া বেগম, শাহনাজ পারভীন ও নাসিমা বেগমের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, বরগুনার বামনা উপজেলার বাসিন্দা সোবাহান মাষ্টার, কবির, নজরুল, আজহার উদ্দিন মাস্টার, হালিমা বেগম, ফিরোজা বেগম ও নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়াও বরগুনা সদর ও বেতাগীর সাত জনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেন আলহাজ্ব এম এম জাকারিয়া।

এছাড়াও ওই ৩২ যাত্রীর ফিরতি টিকেটের বিমান ভাড়া ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ মুবিন জানান, বৃহস্পতিবার পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মোহাম্মদ জাকারিয়া সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে আসামি পাঁচজনের বিরুদ্ধে সমন জারী করে।

বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান মনজু বলেন, আসামিরা ধর্মীয় বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে মানুষদের হয়রানি করছে। একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে তারিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আমারা বাদীর ন্যায্য পাওনা আদায়ে আইনি লড়াই লড়ে যাবো। যাতে কেউ ধর্মীয় বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে মানুষদের হয়রানি না করতে পারে।

বিআরইউ