নোবিপ্রবি’র বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে উপাচার্যের মতবিনিময়

ইমাম উদ্দিন আজাদ, নোয়াখালী প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৯:০০ পিএম

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল এর সাথে  গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।এ সময় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার নোয়াখালী জেলা ও নোবিপ্রবি সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ করেন। 

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময়কালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল চব্বিশের জুলাই-আগস্টে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এসময় তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমি ৫ সেপ্টেম্বর থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তখন সারা দেশেই একটা অস্থির অবস্থা বিরাজমান ছিলো এবং প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো  বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। আপনারা জানেন আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম ক্লাস চালু করেছি এবং ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষাও শুরু হয়েছিলো। আমি যোগদানের পর অন্তর্বর্তী সময়ে যারা প্রশাসক ছিলো সেই সকল সহকর্মীদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, পড়াশোনা এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার চেষ্টা করেছি। যেহেতু শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ একটা সময় ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে তাই আমরা চেষ্টা করেছি বিভিন্ন কর্মশালা এবং ট্রেনিং আয়োজনের মাধ্যমে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ট্রমাটাইজড অবস্থা থেকে উত্তরণ করার জন্য।    

এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুতই আমাদের মেডিকেল সেন্টারে যাতে ডাক্তারের সেবা ২৪ ঘণ্টা পাওয়া যায় সে চেষ্টা করেছি। বর্তমানে মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও প্রত্যেক আবাসিক হলে উপযুক্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে ফার্স্ট এইড বক্স, নেবুলাইজার এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের পাশাপাশি আগামী মাস থেকে শিক্ষার্থীরা বেসিক মেডিকেল টেস্টগুলো বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারেই করতে পারবে। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অত্র অঞ্চলের স্থানীয় মানুষজনও এই সেবার আওতাভুক্ত হবেন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যারা হ্যারেজমেন্ট এর শিকার হয়েছে তাদের জন্য প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করছে। গুরুতর আহত দুইজন শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পরিবহন সংকট নিরসনে বিআরটিসির বাস সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আশা করি  বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা আগামী অর্থবছরে চার লেনের হবে বলে বিশ্বাস করি।

এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, একসময় একাডেমিক ভবন-৩ কে এই  বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃখ বলা হলেও আমি সেই দুঃখ ঘোচানোর চেষ্টা করছি। ৩৪২ কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট একনেক এর প্ল্যানিং কমিটিতে পাশ হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই বিশ^বিদ্যালয়কে একটা সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে ইউজিসিতে চার কোটি ৪২ লাখ টাকার আরেকটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। বিশ^বিদ্যালয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। শীতকালীন পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলা সহ এই  বিশ্ববিদ্যালয়কে অত্র অঞ্চলের একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, র‌্যাংকিংয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে আমরা র‌্যাংকিং সেল গঠন করেছি। বায়োলজিক্যাল গবেষণা এগিয়ে নিতে এনিমেল হাউজ গঠন করেছি। ইতিমধ্যে বিদেশের প্রায় ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার আওতায় নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় একধাপ এগিয়ে যাবে।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে মাননীয় উপাচার্য  বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সাংবাদিকসহ  সুশীল সমাজের সহযোগীতা কামনা করেন ও তাদের মূল্যবান পরামর্শকে সাধুবাদ জানান। এসময় সাংবাদিকরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় সবসময় পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ (মুরাদ) এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজিদ হোছাইন চৌধুরী। 

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. গাজী মো. মহসিন। এসময় নোবিপ্রবি ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্স (আইআইএস) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক  মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, দপ্তরসমূহের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  

আরএস