রাঙামাটির পাহাড়ি ঝাড়ু ফুলের কদর দেশজুড়ে

মহুয়া জান্নাত মনি, রাঙামাটি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

শীত মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে ঝাড়ু ফুল ফোটার পূর্ণাঙ্গ সময়। প্রকৃতিগতভাবে পাহাড়ের ঢালু জমিতে এ ফুল ফুটে বলে পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ই সেটি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাজারে এনে বিক্রি করে চলে তাদের পরিবার।

ঝাড়ু ফুল পরিবারের গৃহস্থালির পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রাম থেকে শহরে এমনকি বিত্তবানদের ঘরে এই ঝাড়ু ফুল আঁটি বেঁধে বেশ আগ্রহের সহিত সংরক্ষণ করা হয়। যা পরিচ্ছন্নতার যত আধুনিক ও বিকল্প পণ্য থাকুক না কেন, ঝাড়ু ফুলের কোন বিকল্প নেই।

রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া ঝাড়ু ফুল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা মেটাচ্ছে। প্রাকৃতিক এই ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে বহু পরিবার জীবন নির্বাহ করছে। একই সাথে ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের নারী-পুরুষরা।

পাহাড়ের উর্বর মাটিতে পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঝাড়ু ফুলের আবাদ করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

রাজস্থলী উপজেলার সাপ্তাহিক হাটে দেখা যায়, মূল সড়কের পাশে ঝাড়ু ফুলকে আঁটি বেঁধে সাজিয়ে সারি সারি করে ক্রেতার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন তারা। অনেকে আবার পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করে লাভে বিক্রির আশায় ফুল নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। তবে এই হাটে অনেককেই এই ফুল খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করতে দেখা যায়।

উপজেলার বলি পাড়া, নারাইছড়ি, মিতিংগা ছড়ি, কিন্তু পাড়া, মাঘাইনপাড়া, কুইক্যাছড়ি পাড়া, বগাছড়ি পাড়া, শিলছড়ি, জান্তিমইন, ঘিলামুখ নতুন পাড়াসহ বিভিন্ন গহীন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এসব ফুল সংগ্রহ করে বিক্রির আশায় সাপ্তাহিক হাটের দিন নিয়ে আসেন তারা। দূরত্ব বেশি বিধায় অনেকে হোন্ডায় বা বিভিন্ন সিএনজি চাঁদের গাড়িতে করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন রাজস্থলীর, ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজারে, বাঙ্গালহালিয়া বাজারে, ও রাজস্থলীর ঐতিহ্যবাহী বাজারে।

২০-৩০ শলাকা ফুল দিয়ে একটি ঝাড়ুর আঁটি বাঁধা হয়। প্রতিটি আঁটি আকার ও মানভেদে ৩০-৪০ টাকা বিক্রি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে হাত বদলে ঝাড়ু ফুলের এই স্টিক ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এক বান্ডিল ফুলে ৫০-১০০টি আঁটি থাকে। প্রতিটি বান্ডিল ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। মানভেদে এর দাম কমবেশি হতে পারে।

ঝাড়ু ফুল বিক্রেতা রজিনা তনচংগ্যা বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝাড়ু ফুল কেটে আঁটি তৈরি করে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে রাজস্থলী বাজারে বিক্রি করি। যা পাই তা দিয়ে পরিবারের জন্য বাজার সদায় করে আবার নিজ বাড়িতে চলে যায়। অপরদিকে ছেলে মেয়েদের পড়া শুনার খরচ বহন করি।

অপরদিকে আরেক বিক্রেতা রোজিনা ত্রিপুরা জানান, কাঁচা ফুলের ৩০-৩৫টি শলাকা দিয়ে তৈরি প্রতিটি আঁটি ৩০-৪০ টাকা করে বিক্রি করি। আমি প্রতি সপ্তাহে ঝাড়ু বিক্রি করে সংসারে বাড়তি টাকা রোজগার করে আমার সংসার টিকিয়ে রাখি। এটি আমার পরিবারের বাড়তি আয়।

ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী পারভেজ জানান, দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্নআয়ের লোকজনদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। সময় আসলে আমি ঝাড়ু ফুলের ব্যবসা করি আবার সময়  চলে গেছে  গরুর ব্যাবসা  করি।
এ বিষয়ে রাজস্থলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উলফুল ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অঞ্চলে পিছিয়ে পরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এলাকার জনসাধারণের অর্থনৈতিক চাঙ্গা ও পরিবারের ভরণপোষণ মিটাচ্ছে।

ইএইচ