যে কেউ দেখলে মনে করবে কোন বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠান চলছে। আসলে তা নয়, এখানে চলছে এক ব্যতিক্রমী মেহমানখানার আয়োজন। মেহমানের সংখ্যাও কম নয় প্রায় আড়াই থেকে তিনশ মতো। দীর্ঘ গত দু`বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে নিয়মিত এ আয়োজন।
কিশোরগঞ্জে ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের পান্ডব ব্যাপারী বাড়ির একদল যুবক ইংরেজি মাসের প্রথম শুক্রবার এলেই মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তারা সমাজের হতদরিদ্র মানুষের এক বেলা উন্নত খাবার খাওয়ানোর জন্য আয়োজন করে মেহমান খানার। মেহমান খানায় গতকাল শুক্রবার উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন তিনি বলেন মানবিক দৃষ্টিতে আয়োজনটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাই, আয়োজকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা সাথে ছিলেন সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মো. রেদওয়ান আহমেদ রাফি।
এলাকার যুবক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের অর্থায়নেই এ আয়োজন করা হয়। তাই, আয়োজকরা দাওয়াত কার্ডের মাধ্যমে দাওয়াত করে আসেন অসহায় দরিদ্র পরিবারের সবাইকে। দাওয়াত কার্ড হাতে নিয়ে আসতে থাকেন মেহমানরা। আয়োজকরা জানান, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে এলাকার প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক ও অসহায় দরিদ্র পরিবার গুলো উন্নত মানের খাবার খেতে পারে না।তাদের কথা বিবেচনা করেই নিজেদের অর্থ ও শ্রম দিয়ে তাদের জন্য মেহমান খানার আয়োজন করে থাকেন। আয়োজক কর্মীরা অত্যন্ত খাতির যত্ন করে খাবার পরিবেশ করেন। একজন মেহমান যতক্ষণ খেতে পারেন, ততক্ষণ খাবার দেওয়া হয়। ওই মেহমান খানায় একবেলা ভালোমানের খাবার খেতে দুপুরের আগেই খাবারস্থলে উপস্থিত হন এলাকার অসহায় শিশু বৃদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের দাওয়াতি নারী পুরুষ। আর খাবারের তালিকায় কখনও থাকে ভাত-পোলাও, মাছ-সবজি, গরু-খাসি-মুরগির মাংস ও ডাল। কখনও বা বিরানি/তেহারি বা ভুনাখচুরি। সঙ্গে টমেটো/শষা-খিরার সালাদ। আবার কখনও পরিবেশিত হয় দুধ/দই। বিয়ে বাড়ি মতো সাথে পানের ভাটায় পান সাজিয়ে রাখে খাবার শেষ মেহমানরা পান খায়। প্রতি মাসেই মেহমানখানার আয়োজন অব্যাহত থাকবে, আর মেহমান হয়ে আসবে সমাজের অসহায় মানুষজন। খাবে তৃপ্তির সঙ্গে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
উদ্যোক্তা / আয়োজক মো. শাকিল মিয়া ও কবির আহমেদ জানান, বর্তমানে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সমাজের গরিব ও দরিদ্র মানুষদের পক্ষে ভালোমানের খাবার মাছ-মাংস কিনে খাওয়া কষ্টকর। অনেকে বছরেরও একবার মাংস খেতে পারেনা। সেই দিকটি বিবেচনা করেই তাঁরা এমন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।তাঁদের এমন উদ্যোগ অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে পড়লে উপকৃত হবে গরিব-অসহায় মানুষজন আর এলাকায় মানুষের মাঝে তৈরি হবে সম্প্রতি ও সৌহার্দপূর্ণ।
কালিকাপ্রসাদ এলাকার হাজী নুরুল ইসলাম জানান, পাণ্ডব বেপারিবাড়ির যুবকদের এই মহতী উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এই আয়োজন ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে এলাকায়।
ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, এলাকার ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও যুবকদের সহযোগিতায় এই আয়োজনের মাধ্যমে সমাজে মানুষের মধ্য সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন মানবিক দৃষ্টিতে আয়োজনটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাই, আয়োজকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
আরএস