অভয়নগরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা সেবা, জনবল সংকট

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম

যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অর্ধেকের কম চিকিৎসক ও জনবল নিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। দীর্ঘদিন যাবত সংকটে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ও ঔষধের। ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে রড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে ভবনে বিভিন্ন অংশে। জরাজীর্ণ এই ভবনে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে রোগী, ডাক্তার, নার্সসহ ভুক্তভোগীরা।

এতে করে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। নতুন ভবনের বিষয়ে চাহিদা পত্র দেয়া হলেও কোনোরকম উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

জানা যায়, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবনটি ১৯৭০ সালে নির্মাণ করা হয়। এর প্রায় ৮ বছর পর ৩১ শয্যায় শুরু হয় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। পরবর্তীতে যা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিদিন অভয়নগর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী ফুলতলা, মনিরামপুর, বসুন্দিয়া ও নড়াইলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতশত রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। পঞ্চাশ শয্যা হাসপাতালটিতে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। বেড সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।

বর্তমানে পুরো ভবনের ছাদের পলেস্তার খসে পড়ে রড় বেড়িয়ে পড়েছে। সিলিং ফ্যানের জীর্ণদশা। কয়েকবার ফ্যান পড়ে রোগীরা জখম হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটিতে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে ছাদের বড় একটি অংশ। বিভিন্ন সময় পলেস্তার খসে পড়ে রোগী ও সেবীকারা আহত হবার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নারী ও শিশু ওয়ার্ডে ছাদ। ভাঙাচোরা ও জরাজীর্ণ ছাদের নিচে নারী ও শিশুদেরকে রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর। কিন্তু বিকল্প ভবন না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সর্বমোট ৭৯ পদ শূন্য রয়েছে। ২৯ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে ১৩ জন ডাক্তার থাকলেও এর মধ্যে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছেন। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অনুপস্থিতে কোমলমতি শিশুরা সু-চিকিৎসা পাচ্ছেনা। তাছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, ও সার্জারির ডাক্তার না থাকায় সিজার ও অন্যান্য অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ক্লিনিকগুলো এই সুযোগ নিয়ে অসহায় রোগীদের জিম্মিকরে ইচ্ছামতো টাকা আদায় করে সিজার ও অপরেশন করছে।

এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, গাইনী, কার্ডিওলজীর পদ থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে পদগুলি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। মঞ্জুরীকৃত ২য় (নার্স) ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদ রয়েছে ১৮৮টি কিন্তু এর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ৭৯ টি পদ শূন্য রয়েছে। মঞ্জুরীকৃত নার্স(২য় শ্রেণি) ৩৮জন কর্মরত আছেন। জরুরিভাবে রোগী বহনের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘ দিন ড্রাইভার না থাকায় চলাচল বন্ধ থাকে।

 

চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের কাদিরপাড়া গ্রামের রাবেয়া বেগম, বিলকিসসহ একাধিক রোগীরা বলেন, ডাক্তার কম থাকায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় সু-চিকিৎসা পাচ্ছিনা। আমার শিশুটি অসুস্থ হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ভয়ে আছি যেকোনো মুহূর্তে গায়ে পড়তে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবিকা ফরিদা পারভীন বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জানিনা কখন এই ছাদ ভেঙে অসুস্থ হয়ে আমাদের চিকিৎসা নিতে হয়।

এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলিমুর রাজিব বলেন, বিভিন্ন সময় ছাদের পলেস্তার খসে পড়ে সেবাদানকারী ও রোগীরা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ডাক্তার ও লোকবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যবহৃত হচ্ছে। এ বিষয় আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং ডিজি মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাক্তার ও জনোবল নিয়োগ পেয়ে যাবো। নতুন ভবনের জন্য লিখিতভাবে চাহিদাপত্র দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে সহকারী প্রকৌশলী সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্মকর্তার ভবনটি পরির্দশন করেছেন।

যশোর জেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিআরইউ