সোনাইমুড়ীতে সরব ভূমিদস্যুরা, নীরব উপজেলা প্রশাসন

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:২৩ পিএম

সরকারি খাল, রাস্তা, মহাসড়কের পার্শ্ব জমির ওপরে তৈরি হচ্ছে মার্কেট, দোকান ও পাকা স্থাপনা। গত ৫ই আগস্টের পর দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা জুড়ে। বিভিন্ন সময় খাস জমি দখলের তথ্যচিত্র উপজেলা প্রশাসনের হাতে থাকলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেনা তারা। গত ৬ মাসে দখলকারীদের বিরুদ্ধে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) নীরব ভূমিকায় থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুরা।

তথ্য বলছে, সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া রোড় সংলগ্ন বিজয়নগর পশ্চিম পাড়া খাল দখল করে খালের ওপরে পাকা দোকান তোলা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে এই দখল ও স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।

উপজেলার সতের মাইল এলাকার সোনাইমুড়ী-চাটখিল রোডের পার্শ্ববর্তী খালের জমি দখল করে মার্কেট তৈরি হচ্ছে।

উপজেলা ভূমি অফিসের প্রাচীর ঘেঁষে টিন ও ত্রিপল দিয়ে খাস সম্পত্তি দখল চলছে। ভূমি অফিসের  সামনে এই খাস জমির পরিমাণ প্রায় ১০ ডিসিম।

গত ৬ জানুয়ারি উপজেলার বজরা গ্রামের আমিশাপাড়া-বজরা রোডের পার্শ্ববর্তী আমিশাপাড়া-দিঘিরজান খাল দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেন  মালেক মুনসীর মোড় এলাকার আজিজ আহম্মেদ। খালের পাড় দখল করে পাকা দালান তুলে ছয়টি দোকান করেন তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেসময় খাল দখলের বিষয়টি সোনাইমুড়ী উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে অবগত করলেও ব্যবস্থা নেয়নি তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া রোড় সংলগ্ন বিজয়নগর এলাকার তোফাজ্জল মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন তার বাড়ির সামনের খাল জুড়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন। ইতিমধ্যে তিনি তিনটি দোকানের নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন। প্রতিটি দোকান প্রায় ২০০ ফুট প্রশস্ত।

অন্যদিকে উপজেলার সতের মাইল এলাকার সোনাইমুড়ী-চাটখিল রোডের পাশে ত্রিপল দিয়ে ঘিরে লোকচক্ষুর আড়াল করে তোলা হচ্ছে পাকা দোকান। কৌশল্যারবাগ ভূইয়া বাড়ির আব্দুল বারেকের ছেলে হানিফ মিয়া ও নাবালক মিয়ার ছেলে সারোয়ার মিয়া তুলছেন এই স্থাপনা। সড়ক ও খালের প্রায় ৪০ শতক সরকারি জমি দখল করে তৈরি করা হচ্ছে দোকানগুলো।

এছাড়া খোদ উপজেলা ভূমি অফিসের গা ঘেঁষা ভুলুয়া খালের জমি দখল করে টিন ও ত্রিপল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন রামদাশ নামের এক ব্যক্তি। প্রায় ১০ শতক খাস জমি দখল করে রেখেছেন তিনি। এভাবেই দখল করে এই খালের আরো বিপুল জমি দখল করে রেখেছেন রামদাসের স্বজনেরা। তবে অজানা কারণে এসব সরকারি জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। যে কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ভূমিদস্যুরা।

সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া রোডের খাল দখলের বিষয়ে কথা হলে শাহাদাত হোসেন জানান, খালের ভেতরে তাদের জমি রয়েছে। এছাড়া যতটুকু তারা দখল করে দোকান তুলছেন সেটুকু জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়েছেন। সরকারি খাল কীভাবে জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়েছেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।

সোনাইমুড়ী-চাটখিল রোডের পাশের রাস্তা ও খালের জমি দখল করে দোকান তোলা হানিফ মিয়া জানান, জেলা পরিষদ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে লিজ এনেছেন জানুয়ারি মাসে। পরিষদের সার্ভেয়ার ইমরানকে  টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগের দখলদারেরা পলাতক রয়েছে। তবে দখল বন্ধ হচ্ছেনা। নতুন নতুন দখলদার-ভূমিদস্যুরা খাল ও সড়কের জমি দখল করছে। এসকল দখলকারীদের বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছেনা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যে কারণে তারা একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খাল দখলের কারণে বন্যার চরম দুর্ভোগেও ভূমিদস্যুদের শিক্ষা হয়নি।

প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বে খাসজমি দখলকারীদের তথ্য ও দখলকরা কয়েকটি স্থানের ছবি সোনাইমুড়ী সহকারী কমিশনার(ভূমি) দ্বীন আল জান্নাতের কাছে প্রেরণ করা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দখলদারের এই দৌরাত্ম্য বন্ধে আদৌও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সেই বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আকতার ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) দ্বীন আল জান্নাতের মুঠোফোন কয়েকবার কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি।

বিআরইউ