নাশকতা মামলা

সৈয়দপুরে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান আটক

সৈয়দপুর (নীলফামারী )প্রতিনিধি : প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম

জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নাশকতার অভিযোগে চাল চোর বোতলাগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুনকে গ্রেফতার করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর থানা পুলিশ। তিনি ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ বাড়ী থেকে তাকে আটক করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলী গ্রামের নুর ইসলাম ২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট আসামী কর্তৃক সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে তিনি নিজে বাদী হয়ে ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর ৬৩ জনের নাম উলে­খ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪। এই মামলায় মনিরুজ্জামান জুন এজাহারভুক্ত ২নং আসামী। তাই তাকে অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই মামলার আসামিরা পালিয়ে থাকলেও জুন নিজ বাড়ীতে অবস্থান করাসহ ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত উপস্থিত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে যাতায়াত করাসহ শহরে দিনরাত আনাগোনা করতেন। অনেকটা দাপটের সাথেই ছিল তার চলাফেরা।

গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে সৈয়দপুরে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সৈয়দপুর থানায় ২ টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলাটি করেছেন সৈয়দপুর পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শেখ বাবলু। আর অপর মামলাটি করেন গুলিবিদ্ধ নুর ইসলাম।

মামলা ২ টা হওয়ার পর থেকে প্রধান আসামিরা পলাতক হলেও ইউপি চেয়ারম্যান জুনসহ বেশ কয়েকজন জনসম্মুখে সচরাচর আসলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তাদের আটক করেনি। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে ব্যাপক সমালোচনা ও চাপ দেয়া হলেও নির্বিকার ছিল পুলিশ। অভিযোগ ছিল টাকার বিনিময়ে যেমন মামলার এজাহার থেকে অনেকের নাম বাদ দেয়ার বাণিজ্য করেছে বিএনপি নেতারা। তেমনি পুলিশও আসামি গ্রেফতার না করার বাণিজ্য করেছে।

অবশেষে সরকার অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করায় পুলিশ বাধ্য হয়ে তৎপর হয়েছে এবং এই প্রথম এজাহারভুক্ত একজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে।

এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মেহেদী হাসান খান মারুফ বলেন, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু বকর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে নাশকতা মামলার আসামি মনিরুজ্জামান জুনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে নীলফামারীর জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।

উলে­খ্য, আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই মনিরুজ্জামান জুন ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিতে মেতে উঠে। সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য মহিলা লীগের কেন্দ্রুীয় নেত্রী রাবেয়া আলিম ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিনের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া আচরণ শুরু করে। তার অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি সংবাদ কর্মীদের সাথেও অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেন। এমনকি ভিজিএফের চাল চুরির খবর পেয়ে ইউপি চত্বরে গেলে ৩ জন সংবাদকর্মীকে আটকে রেখে মারধরও করেন।

তাছাড়া ভিজিএফের চাল বিতরণ না করে এলএসডি গুদাম থেকে পাচারের সময় আটক করা হলে প্রশাসন তা উদ্ধার করে বিক্রি করে। এব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও শুধু আওয়ামী লীগের দাপটে তার কিছুই হয়নি। প্রশাসন নির্বিকার থাকায় জুন পরবর্তীতে আরও দেদারসে চুরি করেছে। মহিলা এমপির ডিও লেটারের মাধ্যমে ৯৭ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ এনে নামকাওয়াস্তে প্রকল্প দেখিয়ে সব অর্থ লোপাট করেছে। তিনি আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর  সিন্ডিকেট ও গরু চোরদের গড ফাদার ।

একইভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা হয়রানিমূলক মামলা দেয়াসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তার অভিযোগও রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় দলীয় কার্যক্রমের নামে নানা নৃশংসতামুলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের অমানবিক আচরণের পরও তিনি তার ফেসবুক পেজে নানাভাবে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করাসহ অপপ্রচার চালাতেও পিছপা হন নি।

বিআরইউ