বুখারী শরীফ মুখস্থ করে বিরল কৃতিত্ব অর্জন

আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম

সম্পূর্ণ  বোখারী শরীফ মুখস্থ করে বিরল কৃতিত্বের সাক্ষর রাখলেন  হাফেজ মাওলানা মাসউদুর রহমান। মাত্র ৮ মাস ৯ দিনে তিনি বোখারি শরিফ মুখস্থ করেন। পবিত্র কোরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ বোখারী  শরীফ। বোখারী  শরীফের হাদিস সংখ্যা ৭ হাজার ৫৬৩টি, যা ইমাম বোখারি (রহ.) ৬ লাখ হাদিস থেকে বাছাই করেছেন।

হাফেজ মাওলানা মাসউদুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি চরপাড়া গ্রামে। ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পবিত্র জুমার দিন সকালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা তাজুল ইসলাম ধার্মিক মানুষ, সন্তানদের সেভাবেই ধর্মীয় শিক্ষায় গড়ে তুলেছেন।

হাফেজ মাওলানা মাসউদুর রহমানের পড়াশোনার হাতেখড়ি বাবা-মায়ের কাছে। ৬ বছর বয়সে বড় ভাই মুফতি আশরাফুল ইসলামের হাত ধরে ধনবাড়ি নতুন বাজার নুরানি তালিমুল কোরআন মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে নুরানি ও নাজেরা সম্পন্ন করেন। হিফজ শুরু করেন নিজ গ্রামে হাফেজ রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত আহমদিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায়।

পরে মুফতি হাবিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ইদারাতুল মাআরিফ আশ-শারইয়্যাহতে এক বছর হেফজ পড়েন। ময়মনসিংহের আল জামিয়াতুল  আশরাফিয়া দারুস সালাম, আকুয়া মোড়ল বাড়ি মাদরাসায় হেফজ শেষ করেন। আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্বারী  হাফেজ মাওলানা আবু সালেহ মো. মুসা প্রতিষ্ঠিত তাহসিনুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসায় আরও দুই বছর কোরআন শোনান। ২০১৮ সালে জামিয়া আরাবিয়া মিসবাহুল উলুম কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তান মাদরাসায় কিতাব বিভাগের প্রথম ক্লাসে ভর্তি হন। মিজান থেকে কাফিয়া পর্যন্ত ময়মনসিংহের মাদরাসাতুন নুরে পড়াশোনা করেন। ফিরে আসেন মুক্তাগাছার পৌর গোরস্তান মাদরাসায়। কয়েক বছর পড়েন এখানে। এরপর রাজধানী বসুন্ধরার ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে মেশকাত ও দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন।

‘এসো খত্তে রুকআ শিখি’ নামে একটি হাতের লেখা শেখার বইও লিখেছেন তিনি। হেফজ বিভাগ থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত প্রতিটি বোর্ড পরীক্ষায় মুমতাজ (স্টার মার্কস) হয়েছেন। দাওরায়ে হাদিস শেষ করে বড় ভাই মুফতি আশরাফুল ইসলামের পরামর্শে তাসলিমা ইসলামিক সেন্টার বাগমুছা, সোনারগাঁও মাদরাসায় হেফজুল হাদিস বিভাগে ভর্তি হন। মাত্র ৮ মাস ৯ দিনে বোখারি শরিফ মুখস্থ সম্পন্ন করেন।

অন্যদিকে একই উপজেলার মনতলার গনেশ্যামপুর গ্রামের আরেক বিস্ময় বালক মাত্র ৬ মাস ৩ দিনে পুরো কোরআন মুখস্থ করে অনন্য নজির গড়েছেন। তার নাম মুহাম্মদ কেফায়েতুল্লাহ। বয়স মাত্র ৮ বছর। কিশোর এই হাফেজের বাবা মাওলানা হারুনুর রশীদ স্থানীয় একটি মাদরাসার পরিচালক। মা মাদরাসার শিক্ষিকা। শিক্ষক মা-বাবার অধীনে ছোট থেকেই ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি। কালিকাপুর বেগ মাদরাসায় হাফেজ গিয়াস উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে হেফজ সম্পন্ন করেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তাঁদের দুজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনার আয়োজন করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ মুক্তাগাছা উপজেলা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা আবদুল ওহাব। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী,  মাওলানা এমদাদুল হক, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা আনওয়ারুল হক, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদি, মুফতি আহমদ আলী, মুফতি মাহবুবুল্লাহ কাসেমি, মাওলানা আমিনুল হক, মাওলানা আবদুল হালিম কাসেমি, হাফেজ আহমদ আলী, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা মুঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মুফতি আবদুস সালাম, মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া, মুফতি জাকির হোসাইন, ড. মুফতি গোলাম রব্বানী, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, মুফতি রিয়াজ বিন আবু তাহের, মুফতি এনায়েতুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা ডাক্তার আবদুল বারী প্রমুখ।