বরিশালে যৌবন ফিরেছে মরা খালের

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ফসল উৎপাদন ও কৃষকদের সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে বরিশাল জেলার গৌরনদীতে মৃতপ্রায় ২০ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, বিএডিসি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের মাধ্যমে ইতিমধ্যে অধিকাংশ খালের খনন কাজ শেষ করা হয়েছে।

এর মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিএডিসি’র মাধ্যমে সাড়ে ছয় এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাড়ে বারো কিলোমিটার খাল পুনঃখনন সম্পন্ন হওয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

দখল-দূষণ আর দীর্ঘদিন যাবত খনন না করায় মৃতপ্রায় খালগুলো পুনঃখননের ফলে জোয়ারের পানি ঢুকে খালগুলো নবযৌবন ফিরে পেয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।

সরেজমিন উপজেলার বার্থী, সরিকল ও মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে খাল পুনঃখননের বাস্তব চিত্র।

মাহিলাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম শরিফাবাদ গ্রামের একাধিক কৃষকরা জানান, পশ্চিম শরিফাবাদ খালটি দীর্ঘ বছর যাবত খনন না করায় জোয়ারের পানি উঠতে পারত না। বর্তমানে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে খালটি পুনঃখনন করায় প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক কৃষক উপকৃত হবে।

একাধিক কৃষকরা জানান, পশ্চিম বার্থী খালটি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পুনঃখনন হয়নি। যে কারণে খালটি মরা খালে পরিণত হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য পূর্বে বোরো মৌসুমে সঠিক সময়ে ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা যেত না এবং কৃষকদের দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হতো। বর্তমানে বিএডিসি খালটি পুনঃখনন করে দেওয়ায় সেচ সংকট কমে গেছে। এতে উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি খরচ কমে যাবে। একই কথা জানিয়েছেন, সরিকলের আধুনা ও হোসনাবাদ গ্রামের কৃষকেরা।

বরিশাল বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (সওকা) সৈয়দ ওয়াহিদ মুরাদ জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৌরনদীতে সাড়ে ছয় কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে খনন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খনন কাজ সার্বক্ষণিক পরিদর্শনের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএডিসি গৌরনদী অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আলম চৌধুরী বলেন, ডিজাইন অনুযায়ী খালগুলো পুনঃখননের জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। খালের পুনঃখনন কাজ সম্পন্ন হলে দুই হাজার একশ‍‍` একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে।

তিনি আরও জানান, বর্ষার শেষ সময়ে কৃষকদের জমি থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রতি কিলোমিটার খালে চারটি করে ওয়াটার পাস আউটলেট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. অহিদুর রহমান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় মাহিলাড়া ও সরিকলে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে বারো কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। খালগুলো পুনঃখননের ফলে হাজার হাজার কৃষক সেচ সুবিধা পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পূর্বে বোরো মৌসুমে পানির জন্য কৃষকদের বেগ পেতে হতো। যেই এলাকায় খালগুলো পুনঃখনন করা হয়েছে, সেই এলাকায় এখন আর সেচ সংকট নেই। যে কারণে কৃষকদের মধ্যে স্থিতি ফিরে এসেছে।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, খালগুলো খননের ফলে পরিবেশ সুরক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও দেশীয় প্রজাতির মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভরাট হওয়া খালগুলো খনন করায় কৃষির প্রসার যেমন ঘটবে, তেমনি কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

তিনি আরও বলেন, টরকী-সাউদের খালের এক কিলোমিটার এলাকা দখলের কারণে নিচিহ্ন হওয়ার পর্যায়ে ছিল। দখলদারদের উচ্ছেদ করে সেই এক কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য মরা খালগুলো চিহ্নিত করে পুনঃখননের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইএইচ