কর্তৃপক্ষের মদতে চলছে অনুমোদনহীন সিটি হাসপাতাল

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় অনুমোদনবিহীন সিটি হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকার কারণে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হাসপাতালটি কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনুমোদন না থাকলেও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা এখানে নিয়মিত রোগী দেখছেন। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরব ভূমিকা জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকায় ছয়তলা ভবনে চলছে সিটি হাসপাতালের কার্যক্রম। জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল এবং ঢাকা থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন।

হাসপাতালের প্রবেশপথেই রয়েছে একটি ফার্মেসি। এর পাশে কয়েকটি চেম্বার রয়েছে, যেখানে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন। হাসপাতালের ডানপাশে একটি রিসেপশন ডেস্ক এবং ডায়াগনস্টিক কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে। উপরের তলাগুলোতে অপারেশন থিয়েটার, সাধারণ বেড ও কেবিন রয়েছে। হাসপাতালটি দেখলে বড় পরিসরের একটি প্রতিষ্ঠান মনে হবে। তবে, বেশিরভাগ চিকিৎসকই সরকারি হাসপাতালে কর্মরত।

সিটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ দাবি করছে এটি ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। তবে, সরকার নির্ধারিত লোকবল ও প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই তারা হাসপাতাল পরিচালনা করছে। অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

অনুমোদনহীন ভবন ও অন্যান্য অনিয়ম

হাসপাতাল ভবনের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ভবন। রাজৈর পৌরসভা থেকে পাঁচতলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে তারা ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার অতিরিক্ত তলা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিলেও তারা তা উপেক্ষা করেছে। এছাড়া, মাদারীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদনই করেনি।

কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া

পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম শরীফুল ইসলাম জানান, "পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো হাসপাতাল লাইসেন্স পেতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।"

এছাড়া, মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, হাসপাতালটির ফায়ার লাইসেন্সও নেই। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, অনুমোদনহীন হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকরা কেন চিকিৎসা দিচ্ছেন, সে বিষয়ে তাদের কোনো তথ্য নেই।

হাসপাতাল পরিচালকের বক্তব্য

সিটি হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, "আমাদের আগের একটি হাসপাতাল ছিল, সেই কাগজপত্র দিয়েই আপাতত কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে, নতুন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।"

প্রশাসনের অবস্থান

মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শামিম আক্তার বলেন, "অবৈধ হাসপাতাল বা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। আমরা তাদের অবৈধ হাসপাতালের তালিকা দিয়েছি। তারা কেন ব্যবস্থা নেয়নি, তা বলতে পারব না।"

জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মো. সজীব জানান, "জেলার স্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেবেন সিভিল সার্জন। তবে, হাসপাতালটির বিষয়ে আমরা দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।"

ইএইচ