মধ্যনগরে জলাশয় শুকিয়ে চলছে মাছ নিধন

অমৃত জ্যোতি রায় সামন্ত, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম

সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে চলমান শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ হাওর ও বিল শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাপকহারে মাছ নিধন চলছে।

ইতোমধ্যে কয়েকটি বিল শুকিয়ে মাছ ধরার খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে বর্ষার মৌসুমে পর্যাপ্ত মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা মৎস্যজীবী ও স্থানীয় অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে বর্ষার পানিতে তারা পর্যাপ্ত মাছ পান না। বিশেষ করে মা মাছ নিধন ও পোনার প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ায় ভবিষ্যতে দেশীয় মাছের সংকট আরও বাড়তে পারে।

হাওর গবেষকদের মতে, শীত শেষে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালীন সময়ে জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় মা মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা হাওরের কূয়া ও গভীর সেচের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। হাওরের নদী, খাল ও বিলের গর্তে আটকে থাকা মা মাছ সংরক্ষণ করা গেলে ভবিষ্যতে মাছের প্রজনন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা। অন্যথায় বর্ষার মৌসুমে মৎস্যজীবীদের দুর্দশা আরও বাড়বে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

হাওর গবেষক সজল কান্তি সরকার বলেন, "দেশীয় মাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ হলো হাওর ও বিলের পানি প্রবাহের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। এছাড়া, শুষ্ক মৌসুমে সেচ কার্যক্রম ও মশারী জাল ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি। হাঁসের অবাধ বিচরণও পোনা মাছের জন্য ক্ষতিকর। তাই ইজারাদারদের সচেতন হতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ উপকারী হলেও এটি মাছের চলাচলে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর মাছের অভয়াশ্রমের অভাবে প্রচণ্ড খরায় অধিকাংশ পোনা মাছ নষ্ট হয়, যা মৎস্য সম্পদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।"

মৎস্য সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগের দাবি

মধ্যনগরের মৎস্যপ্রেমীরা চান, প্রতিটি হাওরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পোনা মাছ অবমুক্ত করা হোক এবং শুকনো মৌসুমে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা হোক। তাদের মতে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে মাছের বহু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে ধর্মপাশা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই মৎস্য সংরক্ষণ আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

ইএইচ