গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার এক প্রান্তিক কৃষক নেছার সরকার লুলু। শাক-সবজি চাষে তার দক্ষতা ও উদ্যম তাকে স্থানীয়ভাবে একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করেছে। এবার তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ভিনদেশি সবজি বিটরুট চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের রাঘবেন্দপুর কৃষিমাঠে তার বিটরুট ক্ষেত এখন দেখার মতো। মাটির নিচে লালচে বর্ণের এই সবজি ফললেও ওপরের সবুজ পাতা জানান দিচ্ছে সম্ভাবনার কথা। থাইল্যান্ডের বিটরুট এখন নিজের এলাকায় উৎপাদন হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আগ্রহ নিয়ে আসছেন ক্ষেত দেখতে, কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ সরাসরি কিনে নিচ্ছেন।
ইউটিউব থেকে অনুপ্রেরণা, এখন সাফল্যের পথে
নেছার সরকার লুলু, ইদিলপুর ইউনিয়নের কাঁঠাল লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক। প্রথাগত শিক্ষার গণ্ডি পেরোতে না পারলেও তিনি কৃষিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বাবার ৪ বিঘা ও বন্ধক নেওয়া আড়াই বিঘাসহ মোট সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি আবাদ করেন তিনি।
একদিন ইউটিউবে থাইল্যান্ডের বিটরুট চাষের ভিডিও দেখে তিনি আগ্রহী হন। এরপর অনেক খোঁজখবর নিয়ে যশোরের এক কৃষকের কাছ থেকে ২০ গ্রাম বীজ ২৫০ টাকায় সংগ্রহ করেন। গেল ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বীজতলায় চারা তৈরি করেন এবং জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪০০ চারা রোপণ করেন। এখন একেকটি বিটরুটের ওজন প্রায় ৩০০-৪০০ গ্রাম।
কম খরচে বেশি লাভ
সার, সেচসহ সব মিলিয়ে বিটরুট চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। তবে বর্তমানে বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন, যা থেকে তিনি প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছেন। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় আগামী বছর আরও বড় পরিসরে চাষ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
পুষ্টিগুণ ও চাষের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিটরুট দ্রুত হজমে সহায়তা করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
স্থানীয় কৃষক ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহারুল ইসলাম বলেন, “বিটরুট যে আমাদের দেশে চাষ হতে পারে, তা লুলুর ক্ষেত না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সামনের বছর আমি নিজেও এই চাষ করব।”
কৃষি কর্মকর্তার মতামত
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম জানান, “এ উপজেলায় প্রথমবারের মতো বিটরুট চাষ করেছেন কৃষক লুলু। এটি একটি লাভজনক ফসল, যা দোআঁশ ও এঁটেল মাটিতে ভালোভাবে ফলানো সম্ভব।”
নেছার সরকার লুলু বলেন, “আমি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ চেয়েও পাইনি, তবু হাল ছাড়িনি। ইউটিউব দেখে চাষ করেছি, ফলন ভালো হয়েছে, দামও পাচ্ছি। আগামী বছর দুই বিঘা জমিতে বিটরুট চাষের পরিকল্পনা করেছি।”
নতুন এই উদ্যোগে সফলতার আলো ছড়াচ্ছেন কৃষক লুলু, যা অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে স্থানীয় কৃষকদেরও।
ইএইচ