ফসলি জমির বুক চিরে চলে যাচ্ছে ট্রাক্টরের সারি। লক্ষ্য, জমি থেকে মাটি কেটে তা ইটভাটায় নিয়ে আসা। আধুনিক ভেকু মেশিন দিয়ে জমির মাটি কাটার কাজ চলছে অত্যধিক। যেসব জমিতে এক সময় ধান আবাদ হতো, সেসব জমিতে এখন বিশাল গর্ত হয়ে যাচ্ছে।
শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়।
এতে জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে এসব ফসলি জমি। দেশে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি আইনগতভাবে নিষিদ্ধ, কিন্তু বেশিরভাগ ইটভাটার মালিকরা এই আইন উপেক্ষা করে মাটি কেটে তা ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনও তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর অবশ্য আইন লঙ্ঘনকারী ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও, বাস্তবে ফসলি জমি ধ্বংসের ঘটনা নিয়মিতভাবে ঘটছে।
অপরদিকে, ট্রাক্টরে মাটি লোড করে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের ফলে কাইশ্যার মোড় থেকে কার্তিকপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে, দিনের বেলায় ধুলাবালি আর দুর্ঘটনার ভয়ে শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। তবে, স্থানীয়রা প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে যে, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালী এক শ্রেণির মানুষ, যেমন সরকার, মালেক মোল্লা, ফয়সাল গাজী, আমজাদ মোল্লাসহ কয়েকজন এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি এলাকা, সূর্যমনি, চর হোগলা জোড়া ব্রিজ, চর হোগলা আলাউদ্দিন সরকার বাড়ির পাশে সহ বেশ কয়েকটি স্থান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে অসাধু ইটভাটা মালিকরা। ভাটা মালিকরা নানা কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু কিছু কৃষক অজ্ঞতাবশত বা প্রলোভনে পড়ে ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব ইটভাটার চারপাশে দেখা যাচ্ছে অব্যাহত কর্মযজ্ঞ। এই অবস্থায় স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন অবশ্যই এই অনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক আবুল বাসার জানান, "জমির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে ফসলের কালো দাগ হয়ে সমস্যা হচ্ছে এবং ইটভাটার ধোঁয়ায় ফলমূলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।" আরেক কৃষক আলি আজম বেপারী বলেন, "ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের বাধা উপেক্ষা করে জমি থেকে মাটি নিচ্ছে, এতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।"
ইটভাটার পাশের বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, "এক সময় আমাদের বাড়ির গাছগাছালিতে প্রচুর ফল থাকলেও এখন তা কমে গেছে। ভাটা মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম চালাচ্ছে। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।"
জেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, "ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা এবং ইটভাটার কার্বনের কারণে জমি অনুবর্র হয়ে পড়ে, পাশাপাশি আশপাশের গাছপালারও ক্ষতি হয়। কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন রয়েছে, তবে শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা যাবে না। পুকুর খনন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি, না হলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।"
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, "বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা জানি, ভেদরগঞ্জে কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে, শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
ইএইচ