যশোরের চৌগাছা পৌরশহর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।
বিশেষ করে, পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ওসি আনোয়ার হোসেনের যোগদানের পর থেকে চুরি-ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলায় ছয়টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে এক মাসে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু, শেষ তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ কোনো আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি, যা পুলিশের ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই নিরব ভূমিকার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার রাতে ফুলসারা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে বিএনপি কর্মী আজগার আলীকে গুলি করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ইমরান হোসেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে গুলিবিদ্ধ আজগারকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং ঘটনাস্থল থেকে দুটি রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করেন।
এর আগে, ১০ মার্চ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে স্বামী রকিবুল ইসলামের হাতে স্ত্রী রোকসনা খাতুন খুন হন, কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়।
৮ মার্চ ভোরে পাতিবিলা গ্রামের শরিফুল ইসলামকে (৪৫) তার ছেলে রমিম (২১) কুপিয়ে হত্যা করেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরেও পুলিশ রমিমকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গত ৩০ জানুয়ারি অপহরণের শিকার ট্রাক ড্রাইভার মিন্টু মিয়াকে সন্ত্রাসীরা ডেরা থেকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ হামলার শিকার হয়, যার ফলে দুই পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হন। তবে এ বিষয়ে পুলিশ সুপার অভিযোগ দায়ের করার পরও পুলিশ আহতের বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, চৌগাছা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রি বেড়েছে, এবং পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা নেমে এসেছে।
স্থানীয় নেতারা বলেন, পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা গোলাম মোরশেদ বলেন, সম্প্রতি উপজেলায় হত্যা, চুরি, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের দৌরত্ব বেড়েই চলেছে। কিন্তু পুলিশ সন্ত্রাসীদের দমন না করে চৌগাছার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে পতিত সরকার আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, চৌগাছা থানার পুলিশ এখনো আওয়ামী লীগের দালালি করছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শহরে দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশের ভুমিকা নিরব। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও পুশিল গুরুত্ব দিচ্ছেনা।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনসহ উপজেলার সকল কর্মকর্তাদের মনে এখনো আওয়ামী প্রীতির ভুত চেপে রয়েছে। পুলিশের নিরব ভূমিকার কারণে অসাধু চক্র উপজেলাকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করছে।
এদিকে, চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "পুলিশের তৎপরতা মোটেও ঝিমিয়ে পড়েনি, আমরা সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "ইদকে সামনে রেখে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।"
এভাবে, চৌগাছা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
ইএইচ