ভেদরগঞ্জে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৮:১৮ পিএম

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে ভেদরগঞ্জের ইলিশ অভয়াশ্রম।

এ সময় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এসব চাল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে নিবন্ধিত জেলেদের কার্ড যাচাই বাছাই করে বিতরণ করার কথা।

তবে অভিযোগ উঠেছে, চলতি জাটকা মৌসুমে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ৮০ কেজি চালের মধ্যে ৩ থেকে ৪ কেজি করে চাল কম দেওয়া হচ্ছে। সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কবির হোসেন এই অনিয়মের সাথে জড়িত বলে স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আগেও চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে তিনি প্রতি বারই অনিয়মের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে দাবি জেলেদের।

রোববার বিকালে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ইউনিয়ন কার্যালয়ে চাল দেয়া হলেও সেখানে কোন চাল পরিমাপের যন্ত্র ছিল না। স্থানীয়দের মতে, জেলেদের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করা হচ্ছে। জনপ্রতি ৮০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৭৬ থেকে ৭৭ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জেলেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তবে ইউপি সচিব কবির হোসেনের ভয়ে তারা মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

জেলেরা অভিযোগ করেন, চাল বস্তাগুলো ফুটো করে কমিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানানো হলে ইউপি সচিব কবির হোসেন জেলেদের কথা না শুনে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হন।

এদিকে, রবিউল ও আল-আমীন হোসেন নামে দুই জেলে বলেন, “আমরা সরকারের দেওয়া অভিযান মেনে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। সংসার চলে না। সন্তানদের নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। তারপরও ৮০ কেজি চালের মধ্যে ৭৬-৭৭ কেজি দেওয়া হচ্ছে। এই অনিয়মের বিচার করবে কে?”

সখিপুর ইউনিয়ন সচিব কবির হোসেন বলেন, “খাদ্য সহায়তা নেওয়ার জন্য জেলেদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। চাল কম দেওয়া হয় না। আমাদের দেওয়া চাল গুদাম থেকে যতটা পাই, ততটাই বিতরণ করি। তবে বস্তার মধ্যে চাল কম থাকলে, সঠিকভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই।”

সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদার চাল কম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আমি চাল বিতরণের উদ্বোধন করে দিয়ে এসেছি। অনিয়ম কিছুটা হতেই পারে। প্রতিটি বস্তার ওজন প্রায় এক কেজি কম হয়। এসব কারণে কিছু চাল কম হয়।”

ট্যাগ অফিসার ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন বলেন, “প্রতি বস্তায় চাল কম আছে, তাই আমাদের কিছুই করার নেই। চাল মেপে দেওয়া হচ্ছে না কেন, এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনি ইউনিয়ন সচিব কবির হোসেনের সাথে কথা বলেন। আমি এর বাইরে কিছুই বলতে পারবো না।’”

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিদ্রা মন্ডল বলেন, “জেলেদের চাল কম দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ইএইচ