সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

কমলনগরের মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম

জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কমলনগরের মেঘনা নদীতে অবাধে মাছ শিকার চলছে। এতে সরকারের পরিকল্পিত লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোস্ট গার্ড, মৎস্য বিভাগ, থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তাদের শিথিলতায় এই চক্রটি সক্রিয়ভাবে মাছ শিকার অব্যাহত রেখেছে।

উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদীপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, রাতের বেলায় মাছ ধরার পর বেশ কয়েকটি নৌকা উপকূলে ফিরে এসেছে। নৌকাগুলোতে জাল স্তূপ করে রাখা হয়েছে এবং দুপুরের মধ্যেই পুনরায় নদীতে নামার প্রস্তুতি চলছে।

একই দিনে পাটারিরহাট ইউনিয়নের মাছঘাট এলাকায় দেখা যায়, ৪-৫টি নৌকা প্রকাশ্যে মাছ ধরছে। নিষেধাজ্ঞার প্রথমদিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বর্তমানে তা মানা হচ্ছে না। নদীতে অবাধে মাছ শিকার করে রাতের আঁধারে পিকআপ ভ্যানে নোয়াখালী, চৌমুহনী, ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানে পাচার করা হচ্ছে। এমনকি কমলনগর সদর হাজিরহাটসহ বিভিন্ন বাজারেও এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, দুই প্রভাবশালী নেতা প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করে জেলেদের মাছ ধরতে বাধ্য করছেন। পাটারিরহাট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও পাটারিরহাট মাছঘাটের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক তালুকদার লুধুয়া থেকে পাটারিরহাট পর্যন্ত নদী নিয়ন্ত্রণ করছেন।

অন্যদিকে, উপজেলা যুবদলের সদস্য ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নের (ইউপি) সদস্য মো. হেলাল মাতাব্বরহাট থেকে মতিরহাট পর্যন্ত এলাকার জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের অধীনে প্রায় ২০-২৫টি নৌকা নিয়মিত নদীতে নামছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা কার্যকর ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাহেবেরহাট ইউনিয়নের কয়েকজন জেলে কমলনগর প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেন, সরকার দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিলেও হেলাল মেম্বারের নেতৃত্বে প্রতিদিন মাছ ধরা হচ্ছে। এ কাজে সহযোগিতা করছে মফিজ মাতাব্বর, আজাদ মাতাব্বর, মালেক মাঝি, সিরাজ মাঝি, শুক্কুর মাঝি ও কবির মাঝি।

এ বিষয়ে পাটারিরহাট ইউনিয়ন মাছঘাটের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক তালুকদার বলেন, অভিযানের পর থেকে তিনি নদীর পাড়ে যান না এবং যারা অভিযোগ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

সাহেবেরহাট ইউনিয়নের সদস্য মো. হেলাল বলেন, তিনি অভিযানের পক্ষে এবং কোনো অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত নন। কারা মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "দক্ষিণে রাজ্জাক তালুকদার ও বেলাল মাঝি এসবের সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে কথা বললে সব তথ্য পাওয়া যাবে।"

কমলনগর কোস্ট গার্ড কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, "আমরা একদিকে অভিযান দিলে অন্যদিকে মাছ ধরার কার্যক্রম চলতে থাকে। বিশাল নদী আমাদের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে আমাদের বিরুদ্ধে ম্যানেজ করার অভিযোগ সত্য নয়।"

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, "নদীতে অভিযান পরিচালনার নিয়ম আমাদের নেই। তবে যারা মাছ বিক্রি ও পাচারে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।"

কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা জানান, "আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে কিছু অসাধু চক্র নিয়মিত মাছ ধরছে, যা সম্পর্কে আমি অবগত নই।"

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি মো. রাহাত উজ জামান বলেন, "নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাছ ধরার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

ইএইচ